ভারতীয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

black Pangus covid coronaকরোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন দেশে এমন অন্তত দুজনের শরীরে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ শনাক্ত হয়েছে। সম্প্রতি ভারতে বিরল ছত্রাকজনিত এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দুজন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেল। অনেকেই মনে করছেন ভারতে এই রোগের বিস্তার ঘটায় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে।

চলতি মাসে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাদের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত করা হয়।

এদিকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে ঢাকায় এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন আগে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই রোগী অন্যান্য রোগের পাশাপাশি মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন। তার নাম পরিচয় জানানো হয়নি।

বাংলাদেশে নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে এই ছত্রাকবাহিত রোগ। যা বিরল কিন্তু সাংঘাতিক। এটি মিউকরমাইসিটিস ছত্রাক থেকে হয়। এটি মৃত্তিকা এবং পচা পাতার মতো ক্ষয়কারী জৈব পদার্থের মধ্যে পাওয়া একটি ছত্রাক। এই বিরল সংক্রমণটি সাধারণত মাটি, গাছপালা, সার বা পচনশীল ফল ও সব্জির মধ্যে যে শ্লেষ্মা থাকে, তার থেকেই ছড়ায়। মানুষের দেহে সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এই সংক্রমণ। যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাঁদের করোনা হয়েছে, যাঁদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যাঁরা ক্যানসার, এইচআইভি, এইডস-এ আক্রান্ত, সেই সব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ প্রাণহানিকর হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, মিউকরমাইসিটিস ছত্রাক থেকে মিউকরমাইকোসিস হয়ে থাকে। এটি বাতাসের চেয়ে মাটিতে এবং শীত ও বসন্তকালের চেয়ে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই প্রতিদিন এই আণুবীক্ষণিক ছত্রাকের স্পোরের সংস্পর্শে আসে। সুতরাং এই মিউকরমাইসিটিসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব।

তবে, বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই ছত্রাক ক্ষতিকর নয়। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে তাদের শরীরে মিউকরমাইসিটিসের স্পোর প্রবেশ করলে ফুসফুস ও সাইনাস আক্রান্ত হতে পারে। যা পরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে।

সিডিসি’র মতে, এই বিরল ছত্রাকে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ। তবে, ৯২৯টি ঘটনা নিয়ে করা ২০০৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে মৃত্যুহার ৫৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সব বয়সী মানুষের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি না থাকায় এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই।

তারা আরও জানান, কোভিড-১৯ ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, যারা স্টেরয়েড নিচ্ছেন, ক্যান্সার আক্রান্ত অথবা যারা অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই নয়, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কারণেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

ভারতে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার ২০০ জনের শরীরে মিউকরমাইকোসিস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যেসব কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে।

ভারতের তামিলনাড়ু, গুজরাট, ওডিশা, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা- এই পাঁচ রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা রোগীরা সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার রোগীরা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাই, তাদের সতর্কভাবে চিকিৎসা দেওয়া উচিত।’

সিডিসি’র গাইডলাইন বলছে, অ্যান্টি ফাঙ্গাল মেডিসিন ব্যবহার করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসা করা হয়। এসব ওষুধের বেশিরভাগই শিরা পথে দেওয়া হয়। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসায় সবচেয়ে প্রচলিত ওষুধের মধ্যে আছে অ্যাম্ফোটেরিসিন বি। এই ওষুধটি সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চিকিৎসায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

সেরে উঠতে রোগীকে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই ওষুধ দিতে হতে পারে। তবে, কত তাড়াতাড়ি রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা আরম্ভ করা হয়েছে তার ওপরও এটা নির্ভর করে।

সম্প্রতিকালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রায় ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার করে রোগীর ছত্রাক আক্রান্ত কোষ ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এতে কিছু রোগী তাদের ওপরের চোয়াল ও চোখ হারিয়ে থাকেন।

Share this post

scroll to top