বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকাজ চলমান রাখার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এমন আদেশের ফলে জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় বিচারিক রায় দিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
আপিল বিভাগের রায়ে ন্যায়বিচার পাননি বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
এদিকে পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে রায় ঘোষণার জন্য আজ দিন ধার্য থাকায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০১০ সালে তিন কোটি ১৫ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে দুদক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া ৫ সেপ্টেম্বর ছাড়া আর একবারও আদালতে হাজির হননি। এ জন্য দুদক প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ব্যতিরেকেই বিচার চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হয়।
আবেদনের শুনানি শেষে ২০ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছাড়াই এ মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
আদেশে আদালত বলেন, ‘খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে ৫ সেপ্টেম্বর বলেছেন- তিনি বারবার আদালতে আসতে পারবেন না।
এরপর ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর ও আজও (২০ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়া কারাগার কর্তৃপক্ষকে বলেছেন- তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। এমতাবস্থায় পিপির পিটিশন গ্রহণ না করলে বিচার বিলম্বিত হবে।
অর্থাৎ আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, খালেদা জিয়া আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। ন্যায়বিচারের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে জামিনে রেখে বিচার চলবে।’
এর পর ২৭ সেপ্টেম্বর এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করা হয়। সেই রিভিশন আবেদন ১৪ অক্টোবর খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর পর ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে এ আপিল আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুদক।
তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়।
এর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ২০১৫ সালের ৫ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
উচ্চ আদালতের আদেশে সাক্ষীদের ‘রিকল’ করায় ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়।
২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর এ মামলায় নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া।ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্ক কার্যক্রম শুরু হয়।
ওই সময় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি একসঙ্গে চলেছে। সেই সময় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক কার্যক্রম অগ্রসর হলেও এ মামলার যুক্তিতর্ক তেমন অগ্রসর হয়নি।
৩০ জানুয়ারি এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ সাত বছর কারাদণ্ড দাবি করে দুদক প্রসিকিউশন।
এর পর থেকে দীর্ঘদিনেও আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক কার্যক্রম সমাপ্ত না করায় অবশেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। মামলায় ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর দুর্নীতির এ মামলায় খালেদা জিয়া হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। এরও আগে
২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর বিদেশে থাকাকালে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে কারাগারে থাকলেও এ মামলায় তিনি অস্থায়ী জামিনে আছেন।
প্রসঙ্গত চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়।
একই সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত।
রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। সেখান থেকে সম্প্রতি তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।