বিএসএফ ১০ বছরে সীমান্তে ৪৫৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে : অধিকার

মো. আব্দুল কাইয়ুম : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী হত্যার নবম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মকান্ড নিয়ে সোচ্চার ও আলোচিত মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার” বিবৃতি দিয়েছে। অধিকার এর বিবৃতিতে জানানো হয়,  ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ‘র সদস্যরা বাংলাদেশ ভারত-সীমান্তে গুলি করে এই কিশোরীকে হত্যা করে তাঁর লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু ফেলানী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ এবং তার নির্দেশদাতা উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কোনো শাস্তি হয়নি।

অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ ৪৫৫ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করে। এছাড়া একই সময়ে বিএসএফ ৬৫৭ জন বাংলাদেশী আহত এবং ৫১৮ জন বাংলাদেশী অপহরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই বিএসএফ ৪১ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে।

ফেলানী হত্যার প্রহসনমূলক বিচার বিএসএফ এর নিজম্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে অনুষ্ঠিত হয় এবং এই আদালত (জিএসএফসি) অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। পরবর্তীতে একই আদালত সেই রায় পুনর্বিবেচনার পর আগের রায় বহাল রেখে অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে।

ফেলানী হত্যা ছিল বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের ওপর ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতির একটি চরম দৃষ্টান্ত। সীমান্তে বাংলাদেশী শিশু কিশোরদের হত্যা-নির্যাতন বিএসএফ’র জন্য নতুন কিছু নয়। উদাহরন হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, ২০১০ সালে বিএসএফ সদস্যদের নির্যাতনে হাসনাত হালশাম (১৫) নামের এক স্কুল ছাত্র নিহত হন। ২০১৫ সালে হাসানুজ্জামান (১৬) নামে একজন স্কুল ছাত্র এবং ২০১৭ সালে সোহেল রানা ও হারুন অর রশীদ নামে আরো দুইজন স্কুল ছাত্র এবং ২০১৯ সালে সোহেল রানা বাবু (১৪)৫ কে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করে।

অপরদিকে, নিজস্ব সীমানা, ভূখন্ডের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা দৃঢ় না হওয়ার সুযোগে ভারতের রাজনৈতিক এবং অথনৈতিক আগ্রাসনের পাশাপাশি তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর নির্যাতন ও নিপীড়ন সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। প্রতি বছরই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বহু সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিক বিএসএফ এর গুলিতে অথবা নির্যাতনে হয় মৃত্যুবরণ করছেন অথবা আহত হচ্ছেন। এমনকি বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেআইনীভাবে অনুপ্রবেশ করে অপহরন এবং লুটপাট করছে। অথচ দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এই সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী যদি কোন দেশের নাগরিক অনুনোমোদিতভাবে সীমান্ত অতিμম করে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হবার কথা এবং সেই মোতাবেক ঐ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু ভারত দীর্ঘদিন ধরে ওই সমঝোতা এবং চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুদীর্ঘ চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশী স্থল সীমান্ত আছে, যার প্রায় পুরোটাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ভারত। এছাড়াও ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে জিরো লাইনের ভেতরেও কাঁটাতারের বেড়া ও পর্যবেক্ষণ পোষ্ট নির্মাণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অবৈধ অভিবাসী শনাক্তকরণের জন্য প্রণীত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়া ভারতীয় নাগরিকদের ভারত সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশ-ইন করা শুরু করেছে৮, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

অধিকার ফেলানীসহ বিএসএফ সদস্যদের হাতে নিহত বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা-নির্যাতনসহ সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচার দাবি করছে। এছাড়া অধিকার বাংলাদেশের ওপর ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। অধিকার মনে করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র কখনোই এই ধরনের আগ্রাসনকে মেনে নিতে পারে না। বাংলাদেশকে তিনদিক থেকে ঘিরে রাখা ভারতের মতো একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলকেও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে ব্যাপক অসন্তোষ দানা বাঁধছে তা শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Share this post

scroll to top