লিভাপুলের বিপক্ষে মেসি ছিলেন সবসময় ‘শূন্য’। রেকর্ড গড়া যারা নিত্য ডাল-ভাতে পরিণত হয়েছে, সেখানে এই তিক্ত রেকর্ড মেসির নামের সাথে বেমানান। তাই ভক্তদের চাওয়া-মেসির চাওয়া ছিল একটাই, লিভারপুলের বিপক্ষে গোল খরাও কাটানো। সেটার প্রমাণ দিতেও দেরি করেননি লিওনেল মেসি। ন্যু ক্যাম্পে হাজার হাজার দর্শকের সামনেই লিভারপুলের জালে দু’বার বল পাঠিয়ে সেই চাওয়ার প্রমাণ দিলেন। দলকে নিয়ে গেলেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের পথে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জিতেছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। জোড়া গোল করেন মেসি, অন্য গোলটি লুইস সুয়ারেসের।
মজার ব্যাপার হলো, ২০০৫ সালের এই দিনে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোলের খাতা খুলেছিলেন মেসি। ১৪ বছর পর সেই দলের হয়ে স্পর্শ করলেন ছয় শ’ গোলের মাইলফলক।
খেলার প্রথম মিনিটে আক্রমণে গিয়ে শুরুটা করে বার্সেলোনা। তবে দ্রুতই গতিময় ফুটবল দিয়ে তাদের চাপে ফেলে দেয় লিভারপুল। মোহাম্মদ সালাহর গতি ভীতি ছড়ায় বার্সেলোনার রক্ষণে। প্রথমার্ধে সাদিও মানে ও সালাহ প্রচুর বল পেলেও সেভাবে মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগানকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। অন্যদিকে সাবেক ক্লাব লিভারপুলের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরেন ফিলিপে কৌতিনহো। তৃতীয় মিনিটে তার রক্ষণচেরা পাসে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে যান ইভান রাকিতিচ। গোলে শট না নিয়ে ক্রোয়াট মিডফিল্ডার কাট ব্যাক করতে চেয়েছিলেন সুয়ারেসকে। দারুণ ব্লকে সেবার দলকে বাঁচান জোয়েল মাতিপ। নিজেদের রক্ষণে লিভারপুলের ডিফেন্ডারদের ট্যাকলগুলো ছিল দুর্দান্ত। ত্রয়োদশ মিনিটে দারুণ এক স্লাইডে মেসিকে হতাশ করেন অ্যান্ডি রবার্টসন। প্রতি-আক্রমণে সুযোগ এসেছিল লিভারপুলের সামনে। তবে সুবিধাজনক জায়গায় থাকা মানেকে খুঁজে নিতে পারেননি সালাহ। বার্সেলোনার অপেক্ষার অবসান হয় ২৬তম মিনিটে। চলতি আসরে নিজের প্রথম গোলে দলকে এগিয়ে নেন সুয়ারেজ। জর্দি আলবার দারুণ ক্রসে স্লাইড করে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জাল খুঁজে নেন লিভারপুলের সাবেক এই স্ট্রাইকার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি বার্সেলোনার পাঁচশতম গোল। তাদের আগে এই কীর্তি ছিল কেবল রিয়াল মাদ্রিদের। ৩২তম মিনিটে কৌতিনিয়োর শট ব্লক করেন ফাবিনিয়ো। শুরুর গতি প্রথমার্ধের শেষ দিকে কমে একটু। প্রথমার্ধে গোলের জন্য বার্সেলোনার চেয়ে বেশি শট নেয় লিভারপুল। তবে তাদের ছয় শটের একটিও ছিল না লক্ষ্যে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বার্সেলোনা গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয় লিভারপুল। ৪৭তম মিনিটে জেমস মিলনারের বুলেটগতির বাঁকানো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন টের স্টেগান। ৫৩তম মিনিটে কোনোমতে সালাহর শট ঠেকিয়ে আবারও বার্সেলোনার ত্রাতা গতকাল সাতাশে পা দেওয়া এই গোলরক্ষক। ৫৯তম মিনিটে সালাহর কাটব্যাকে সুযোগ আসে মিলনারের সামনে। গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। আক্রমণের ঝাপটা সামাল দিতে রক্ষণে শক্তি বাড়ান আরনেস্তো ভালভেরদে। কৌতিনিয়োর জায়গায় নামান নেলসন সেমেদোকে। কাজও হয় তাতে। ৬৮তম মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ এসে যায় সুয়ারেজের সামনে। মেসির নিখুঁত ক্রস থেকে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেলেও তালগোল পাকিয়ে শট নিতে পারেননি তিনি। ৭৫তম মিনিটে ব্যবধান ২-০ করে ফেলেন মেসি। সার্জিও রবের্তোর গায়ে লাগার পর বল পেয়ে যান সুয়ারেস। তার শট ক্রসবারে লেগে ফিরলে এগিয়ে এসে নিয়ন্ত্রণে নেন অরক্ষিত বার্সেলোনা অধিনায়ক। বুক দিয়ে বল নামিয়ে জালে পাঠাতে কোনো সমস্যা হয়নি তার।
লিভারপুলের বিপক্ষে তৃতীয় দেখায় এই প্রথম গোল পেলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় সব মিলিয়ে ৩২ দলের বিপক্ষে গোল করলেন তিনি। মেসির চেয়ে বেশি ৩৩ দলের বিপক্ষে গোল আছে কেবল রাউলের।
৮২তম মিনিটে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে স্কোর লাইন ৩-০ করেন মেসি। ঝাঁপিয়েও তার নিখুঁত শট ঠেকাতে পারেননি লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন। মেসিকেই ফাবিনিয়ো ফাউল করায় ডি বক্সের অনেক বাইর থেকে ফ্রি-কিক পেয়েছিল বার্সেলোনা। বলটি চোখের পলকে জাদুকরে শর্টে জালে জড়ায়। চলতি আসরে অধিনায়কের এটি দ্বাদশ গোল।
দুই মিনিট পরই ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় লিভারপুলের। রবের্তো ফিরমিনোর শট গোললাইন থেকে ঠেকিয়ে দেন রাকিটিচ। ফিরতি বলে সালাহর শট ফিরে পোস্টে লেগে।
ম্যাচে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ব্যবধান বাড়ানো সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে বার্সেলোনা। ওসমান দেম্বলে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তার হাতে বল তুলে দেন।
দেম্বলে দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে।
আগামী মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে ফিরতি লেগে মুখোমুখি হবে দল দুটি।