নুসরাত বলেছিল : ‘আমি মরবো না, আমি বাঁচবো’

‘মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।’

না বাঁচানো গেলো না নুসরাত জাহান রাফিকে। অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে এমন চিঠি লিখে গেলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখতে পারেনি রাফি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন তার মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তার মৃত্যুর সংবাদে ফেনীসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে এসে দূর্বৃত্তরা তাকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এতে তার শরীরের ৮০শতাংশ পুড়ে যায়। ৫ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলো রাফি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করেন। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়। এদিকে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের। ইতিমধ্যে ওই মামলার তিন আসামিসহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ৭ জনকে রিমান্ড দিয়েছে আদালত।

এছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্য অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো: মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রাফির উপর বর্বরোচিত এ হামলার প্রতিবাদে গত ক’দিন ধরে ফেনী ও সোনাগাজীতে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার হয়ে রাফি তার দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠিতে সে ওই ঘটনার জন্য অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে দায়ি করেছে। এবং গ্রেফতার সিরাজ উদদৌলার মুক্তি দাবী করায় তার সহপাঠিদের উপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাফি উত্তর চরছান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসার একমাত্র মেয়ে। তিনিও পেশায় মাদরাসা শিক্ষক।

এদিকে বুধবার অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীটির শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে আসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো মুরাদ হাসান। তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে যাওয়ার মতো সুস্থ হলেই তাকে পাঠানো হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে খোঁজখবর রাখছেন।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top