নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ১৫ মার্চ এক বর্বরোচিত হামলায় ৫০ জন মুসলমান নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে হতাহতদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে অন্যরকমভাবে সম্মান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। ছবিতে দেখা যায়, একজন মুসলিম নারীকে জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত¦না দিচ্ছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। তার চেহারাও বিষণ্ন। তার ওই ছবির ওপরে প্রথমে আরবিতে লেখা রয়েছে সালাম বা শান্তি। এরপর ইংরেজিতে লেখা রয়েছে পিস, যার অর্থও শান্তি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এক টুইটে বলেন, মসজিদে নিহতদের সম্মানে আজ পুরো নিউজিল্যান্ড নিরবতা পালন করেছে। ধন্যবাদ জেসিন্ডা আরডার্ন ও নিউজিল্যান্ডকে। আপনারা মুসলমানদের প্রতি যে সহানুভূতি ও সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছেন তা পুরো বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলমানের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছে। অথচ এর আগে এই নিউজিল্যান্ডেই মুসলমানদের ওপর চালানো বর্বরোচিত হামলায় ব্যথিত হয়ে পড়েছিল পুরো মুসলিম বিশ্ব।
গত ১৫ মার্চ অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্টের মুসলিমবিদ্বেষের শিকার হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন মুসল্লি। এরপর পুরো নিউজিল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল আতঙ্ক। মুসলমানরা নিজেদের ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের দ্ব্যর্থহীন ভূমিকার কারণেই খুব শীঘ্রই পাল্টে গেছে পুরো পরিস্থিতি।
হামলার শিকার মসজিদ দুটিসহ পুরো নিউজিল্যান্ডে গতকাল রীতিমত উৎসবের মেজাজে জুমা আদায় হয়েছে। মুসলমানরা ভিতরে নামাজ পড়েছেন, আর বাইরে সংহতি জানাতে অবস্থান নিয়েছিল হাজারো অমুসলিম।
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বেতারে জুমার আযান প্রচারিত হয়েছে। সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে জুমার নামাজও। নিউজিল্যান্ডের অমুসলিম নারীরাও আজ স্কার্ফ বা হিজাব পরে সংহতি প্রকাশ করেছেন মুসলিমদের সাথে। নিহতদের স্মরণে পালন করা হয়েছে দুই মিনিটের নিরবতা। এক কথায় অভূতপূর্ব এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল পুরো নিউজিল্যান্ডে।
শুক্রবারে সেখানকার পত্রিকাগুলোও বড় করে ছেপেছে শান্তির বাণী ‘আস-সালাম’। আরবি হরফেই বড় করে উল্লেখ করা হয়েছে সৌহার্দ্য আর সহমর্মিতার সেই বাণী। সাধারণ মানুষও বসে থাকেনি। বিভিন্ন দেয়ালে, ব্যানারে তারাও জানিয়েছে সহমর্মিতার বার্তা। আরবি, ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় প্রচার করছে মুসলিমদের সেই শ্বাশত বাণী।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। অভিবাসী ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা থেকেই তিনি ভয়াবহ ওই হামলা চালিয়েছেন। হামলার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রদান করা হবে। আপাতত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রিমান্ডে থাকছে সে।
ব্রেন্টনের ওই হামলার পর দেশের মানুষ মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সরকার কোনোপ্রকার রাখঢাক ছাড়াই মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে বারবার করে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, মুসলিম নারীদের সাহস জুগিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য।
তিনি নিজে মুসলমানদের মতো করে হিজাব পরেছেন, পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, এমনকি পার্লামেন্টে নামাজেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।