খুনি ব্রেন্টনকে থামিয়ে দেয়া দুই মুসলিম ‘বীর’

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় নিহত পাকিস্তানী এক ব্যক্তির ভাই জানিয়েছেন তার গর্ব আর দুঃখের কথা। খুরশিদ আলম বলছিলেন তার ভাইয়ের কথা, যিনি ক্রাইস্টচার্চে গত শুক্রবার বন্দুকধারীর গুলিতে তার ছেলের সাথেই নিহত হন।

কিন্তু মারা যাবার আগে সেই হত্যাকারীকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

“আমিও যদি তার মতোই মৃত্যুবরণ করতে পারতাম!” খুরশিদ এভাবেই মৃত ভাইয়ের কথা স্মরণ করছিলেন। শুক্রবার নামাজের সময় দুটি মসজিদে হামলায় নিহত হন অন্তত ৫০ জন।

সাহসী প্রতিরোধ
পঞ্চাশোর্ধ নাঈম রশীদ ও তার ২১ বছর বয়সী ছেলে তালহা নিউজিল্যান্ডে বাস করছিলেন ২০১০ সাল থেকে। আল-নূর মসজিদে গুলিবিদ্ধ হবার আগে হামলাকারীকে তিনি বাধা দেবার চেষ্টা করেন, যেটি ভিডিওতে দেখা গেছে।

রশীদের এই তৎপরতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে, তাকে সবাই বীর হিসেবে দেখছে। উত্তর পাকিস্তানের শহর অ্যাবোটাবাদে থাকা তার ভাই বলেন, তিনি তার ভাইয়ের কাজে গর্বিত।

“তিনি ছিলেন একজন সাহসী ব্যক্তি,” বলছিলেন খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, আমি সেখানকার লোকজনের কাছে শুনেছি… সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বলেছেন যে তিনি সেই হামলাকারীকে থামানোর চেষ্টা করে কয়েকজনের জীবন বাঁচান।

কিন্তু তিনি একথাও বলেন যে, যদিও তার ভাইকে অনেকেই বীর হিসেবে দেখছে তারপরও ঘটনাটি তার জন্যে খুবই শোকের। ‘‘এটি আমাদের জন্যে গর্বের, কিন্তু সেই সাথে চরম ক্ষতিরও- এটা সত্যি নিজের হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলার মতো। ‘ খুরশিদ আলম বলেন যে এই হামলার ঘটনায় তিনি খুবই ক্ষেপে আছেন।

“সন্ত্রাসীর কোনও ধর্ম নেই,” তিনি বলেন। সেই সাথে এমন ‘খ্যাপাটে মানুষদের’ প্রতিরোধ করার কথাও দাবিও জানান।

আব্দুল আজিজের গল্প
অপর আরেকটি মসজিদ লিনউডে হামলার সময়ও একই ধরনের প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে সেই প্রতিরোধের পেছনে রয়েছেন আব্দুল আজিজ নামে এক ব্যক্তি।

আব্দুল আজিজ বলেন, তিনি মসজিদের বাইরে দৌঁড়ে গিয়ে বন্দুকধারীকে ধাক্কা দিয়ে পাশের একটি ক্রেডিট কার্ড মেশিনের ওপর ফেলে দেন।

সেই ধাক্কায় হামলাকারীর হাত থেকে বন্দুকটি পড়ে যায়। এরপর সে গাড়ির দিকে যায় আরও অস্ত্র নিয়ে আসতে। এসময় আজিজ হামলাকারীর বন্দুকটি কুড়িয়ে নিয়ে তার গাড়ির দিকে আঘাত করে এবং গাড়ির জানালা ভেঙ্গে ফেলে।

তারপর সেই বন্দুকধারী তার হামলা বন্ধ করে এবং কিছুক্ষণ পরেই সে গ্রেফতার হয়।

আদালতে হাসছিল আক্রমণকারী
হত্যাকারী ২৮ বছর বয়সী স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী অস্ট্রেলিয়ান ব্রেন্টন টারান্ট তার সেই হামলার ঘটনা ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করেন। নিউজিল্যান্ডের আদালত তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনেছে। শনিবার তাকে কয়েদীদের সাদা রং-এর শার্ট এবং হাতকড়া পরিয়ে যখন আদালতে হাজির করা হয়, তখন ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সে হাসছিল। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডেন জানিয়েছেন যে, টারান্টের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তার সাথে ছিল মোট পাঁচটি বন্দুক। তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের অস্ত্র আইনের পরিবর্তন আনা হবে।”

তাকে কোনও আবেদন ছাড়াই রিমান্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং ৫ এপ্রিল তাকে আবারো আদালতে হাজির করা হবে। বিচারক ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তার স্বার্থে আটক ব্যক্তির মুখচ্ছবি গণমাধ্যমে ঝাপসা করে দেখাবার নির্দেশ দেন। আরও দুই ব্যক্তি পুলিশের হেফাজতে আছে, তাদের কারো বিরুদ্ধেই পূর্ব অপরাধের কোনও রেকর্ড নেই।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top