ইসরাইলের মদদে বিপজ্জনক হামলার পরিকল্পনা : পাকিস্তানের হুঁশিয়ারিতে পিছু হটে ভারত

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনার পারদ যখন তুঙ্গে তখন ইসরাইলের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে এক বিপজ্জনক হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারত। রাজস্থানের বিমানঘাঁটি থেকে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঠিক সময় এই পরিকল্পনার ব্যাপারে অবগত হওয়ার পর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে যথাযথ জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বার্তা পাঠায়। ফলে বিপজ্জনক পথে পা বাড়ানো থেকে ভারত বিরত থাকে।
পাকিস্তান সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ভারতকে সময়মতো গোয়েন্দারা ও অন্যরা ম্যাসেজ দিয়ে পরিষ্কার করে যে, যদি পরিকল্পনা মতো হামলা করা হয় তাহলে তার উপযুক্ত জবাব আসবে। আর এমন হলে দেশ দু’টির সামনে পেছনে ফেরার কোনো পথ থাকবে না।

ভারতের রাজস্থানের বিমানঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের ভেতরে অন্তত ছয় থেকে সাতটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করেছিল নয়াদিল্লি। তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতের এই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়েছে।

পাকিস্তানের সরকারি সূত্র বলছে, পাকিস্তান এই পরিকল্পনার ব্যাপারে ঠিক সময়েই জানতে পারে এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করে দেয় যে, এ ধরনের যেকোনো হামলার যথাযথ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। পাকিস্তানি গোয়েন্দারা সেই সময় ভারতকে জানায়, ভারত যে হামলা চালাবে তার তিনগুণ বেশি হামলা চালাবে পাকিস্তান।

পাকিস্তানি সরকারি ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘পাকিস্তানের বড় বড় শহর বিশেষ করে করাচি এবং বাহাওয়ালপুরে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিল ভারত। ভারতের সম্ভাব্য এই হামলার ব্যাপারে পাওয়া তথ্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাথে শেয়ার করা হয়েছে। সময়োচিত গোয়েন্দা তথ্য ও গোপনীয় বার্তার ফলে ভারতের কাছে এটা পরিষ্কার করা হয়েছিল যে, যদি পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে এর যথাযথ জবাব দেয়া হবে। ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাবে, যেখান থেকে আর পিছু ফেরার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।’

আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তির মাধ্যমে ভারতের সাথে ইসলামাবাদ শান্তি চায় বলে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে জানায় পাকিস্তান। শান্তি স্থাপনে পাকিস্তানের ইচ্ছা আছে বলেও জানানো হয়। গত সপ্তাহে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় তখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পাকিস্তান ও ভারতের সাথে যোগাযোগ করেন। এই উত্তেজনার সময় প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ছিল।

পাকিস্তানের ওই সূত্র বলছে, গত কয়েকদিন আগে পাক-ভারত উত্তেজনা যেরকম ছিল এখন সেরকম নেই। তবে দেশটির সরকার, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখনো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আটক ভারতীয় পাইলটের মুক্তির পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েকদিনে প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে চেষ্টা করেছেন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় দেশটির কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর (সিআরপিএফ) গাড়ি বহরে হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ানের প্রাণহানি ঘটে। পরে আজাদ কাশ্মিরে যুদ্ধবিমান থেকে অভিযান চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই অভিযানের একদিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের আকাশসীমায় পাল্টাপাল্টি যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান ভারতীয় বিমানবাহিনীর দু’টি বিমান ভূপাতিত এবং একজন পাইলটকে আটকের দাবি জানায়। অন্য দিকে, ভারতও পাকিস্তানের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি তোলে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জানায়, পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সময় ভারতীয় একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ও অভিনন্দন বর্তমান নামে একজন পাইলট নিখোঁজ রয়েছেন।

অভিনন্দনকে আটকের খবর প্রকাশের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। পরে দেশটির পার্লামেন্টে যৌথ এক অধিবেশনে শান্তিপূর্ণ আবহ তৈরির লক্ষ্যে আটক পাইলটকে ভারতে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেন ইমরান। এমন এক অবস্থায় উত্তুঙ্গ সময় পার করেছে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দু’টি দেশ। কয়েক দশকে তাদের মধ্যে এত বেশি যুদ্ধের কাছাকাছি চলে যাওয়ার মতো অবস্থা সম্ভবত সৃষ্টি হয়নি। আর এ যুদ্ধ লেগে গেলে কী হতো পরবর্তীতে তা নিশ্চিত করে কেউ জানেন না।

সূত্র : ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top