সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের বরাদ্দ ১৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, যার অর্ধেকের মতো ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই বিশেষ গুরুত্বের কারণে এই খরচ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ খাতের পেছনে ইসির ব্যয় হয়েছিল এক কোটি টাকার নিচে। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ গুণের বেশি। যদিও তাতে নির্বাচনের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচনে ইসি লাখ লাখ লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাতে তাদের ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি টাকার বেশি। প্রায় একই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনেও। তাতে ইসির ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আগে ইসি এই ব্যয় বাজেট অনুমোদন করেছে।
ইসির এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, উপজেলাতে এত বড় পরিসরের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল না। কারণ এখন যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রায় একই ধরনের প্রশিক্ষণ সংসদ নির্বাচনের জন্য গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও দেয়া হয়েছে। আর এখন যাঁরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন বা করবেন, তাদের ৮০ শতাংশই সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এসব কর্মকর্তা মনে করেন, এই প্রশিক্ষণ থেকে সম্মানী ভাতা পাওয়ার মাধ্যমে মূলত প্রশিক্ষকেরাই লাভবান হচ্ছেন। এ ধরনের কর্মসূচিতে সাধারণত প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন ইসি সচিবালয়ের নির্ধারিত কিছু কর্মকর্তা। এ তালিকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (ইসি), চার কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের সচিবও আছেন, যা অতীতে খুব কমই দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসির নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) কর্মপরিকল্পনা থেকে জানা যায়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দুদিনের এই প্রশিক্ষণে ২৬ ব্যাচে ৬৫০ জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন।
ইভিএমের বাইরে মাঠ পর্যায়ের ভোট গ্রহণের জন্য প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রেও দুদিনের প্রশিক্ষণে ২৬ ব্যাচে ৬৫০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন। ৬৪ জন রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ৪৯১ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ১ হাজার ২০৬ জন কর্মকর্তাকে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৬ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার এক দিনের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৪ হাজার ১০০ টাকা। ২২ হাজার ১৪০ জন পোলিং কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় হবে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৯ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্যয় হবে ২৬ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা।
এ ছাড়া ৬ হাজার ৫৯২ কেন্দ্রে ইভিএমের মকভোটিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
জানতে চাইলে ইলেকটোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। আইনও ভিন্ন। তা ছাড়া ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের একটি অংশ সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেননি। যে কারণে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা আবশ্যক। এর বাইরে উপজেলাতে তুলনামূলকভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। সে জন্য বাজেট বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহার না হলে বাজেট কমে আসবে।
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনের জন্য ৯১০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে সব মিলিয়ে ব্যয় হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকা মতো।