হস্তলিপি বা হাতের লেখা একজন আদর্শ ছাত্রের পরিচায়ক। একজন পরীক্ষার্থীর খাতা দেখার সময় পরীক্ষক মনের অজান্তে সুন্দর হাতের লেখাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য যদি একটি খাতায় কিছু নাম্বারের ঘাটতি থাকে, তাহলে পরীক্ষক লেখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে ওই ঘাটতি পূরণে চেষ্টা করেন। তাই সুন্দর হাতের লেখা হাতের পাঁচ হয়ে আমাদের বন্ধু হতে পারে। এ ছাড়া সুন্দর হাতের লেখা যাদের, তারা পরিচিত মহলে এক ধরনের কদর পেয়ে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাগজপত্রে লেখার সময় সুন্দর ও নির্ভুল বানানে লিখতে জানা ব্যক্তিকে খোঁজা হয়। এই সেদিনও শৈশবে নতুন বইয়ের শুরুতে পরিচিতি লেখার ক্ষেত্রে সুন্দর হাতের লেখা যাদের, তাদের দ্বারস্থ হতো শিশুশিক্ষার্থীরা। সুন্দর হাতের লেখার বা হস্তলিপির গুরুত্ব এখনো সমাজে রয়েছে।
অথচ সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্টফোনের কারণে হস্তলিপির প্রতি অবহেলার বিষষটি স্পষ্ট। একটা সময় হাতের লেখা সুন্দর করতে শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করত। শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও বাড়ির কাজ তথা হাতের লেখা সুন্দর করতে তাগিদ দেয়া হতো। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় এ প্রতিযোগিতায় বেশ উন্মুখ থাকত শিক্ষার্থীরা। এখনো এভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এখন হস্তলিপির প্রতি তেমন মনোযোগী নয়। শিক্ষার্থীদের মতো বড়দের ক্ষেত্রেও বিষয়টি বেশ হতাশাজনক। বর্তমানে স্মার্টফোন সবার হাতে হাতে থাকায় হাতের লেখার প্রতি এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষণীয়। এ জন্য স্মার্টফোন বা কম্পিউটার অনেকাংশে দায়ী।
অত্যাধুনিক মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমসমৃদ্ধ ডিভাইস হচ্ছে স্মার্টফোন। যা পার্সোনাল কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের সাথে মিল রেখে হাতে ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফিচারের সমন্বয়। বর্তমানে মানুষের জীবন চলার ক্ষেত্রে স্মার্টফোন অতি প্রয়োজনীয়। স্মার্টফোনে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ ভিডিও কনফারেন্সিংয়েও কথা বলতে পারছেন।
স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে যেকোনো খবর কিংবা তথ্য পাওয়া যায় নিমিষেই। ঘরে বসেই ক্লাস করা যায় বিশ্বের খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়াও পেশাগতসহ অনেক কাজ স্মার্টফোনে করা খুব সহজ। এমনকি স্মার্টফোনে অফিসের অনেক কাজ ঘরে বসেও করা সম্ভব। এতে সময়, খরচ যেমন সাশ্রয় হয়, পরিশ্রমও কমে। তবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে চিরচেনা জীবনের অনেক কিছু।
অনেকে খাতা, কলমবিহীন স্মার্টফোনে পুরো বই লিখে ফেলছেন! শিক্ষার্থীরাও আজ খাতা, কলমের চেয়ে স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। কিছু লিখতে গেলেই স্মার্টফোন বের করে লিখে নিচ্ছেন। প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাতে গিয়ে আমরা হাতের লেখার প্রতি অবহেলা করছি। এটি কতটুকু কাক্সিক্ষত তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। সুন্দর হাতের লেখা একটি শিল্প। এ শিল্পের প্রতি আমাদের নজর দেয়া উচিত।