কয়েকদিন পরপরই ময়মনসিংহের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের লিফট দুর্ঘটনার খবর শুনা যাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন আইনজীবি, আদালতে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ। জবাবদিহী নিশ্চিত না করায় লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও মাঝে মাঝে দুর্ঘটনা ঘটলে ঘষামাঝা করেই কোন রকমে দায় থেকে মুক্তি নিচ্ছে। এদিকে কর্তৃপক্ষ ও লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের এমন গাফিলতিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন আইনজীবিসহ আদালতে কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তবে দশতলা ভবনের চাহিদার তুলনায় লিফটগুলো কেন ছোট ও হালকা দেয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গণপূর্ত বিভাগের দ্বায়িত্ব অবহেলা ও দ্বায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজসে নিন্মমানের আসবাবপত্র সরবরাহ ও লিফট বিড়ম্বনার ঘটনা ঘটেছে।
জানাযায়, গতকাল সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাঁচ তলা থেকে নামার সময় লিফটে এক মহিলাসহ আটকা পড়েন ১৮ আইনজীবী। তারা টানা ৩৮ মিনিট লিফটে আটকা থাকেন। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এসময় সিনিয়র ৫-৬ জন আইনজীবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আইনজীবীরা আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। ফলে দুপুর দেড়টার পর স্থবির হয়ে পড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম।
গত ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার ময়মনসিংহের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে প্রথম বড় ধরণের লিফট দুর্ঘটনার শিকার হন আইজীবিরা। সেদিন সকালে চালু অবস্থায় হঠাৎ নয়তলা থেকে লিফটটি ছিঁড়ে ছয়তলায় আটকে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে।
২০১৭ সালে নির্মিত ময়মনসিংহের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধনের পর প্রথম কার্য দিবস ছিলো রবিবার। সেদিনই লিফট অটো হয়ে যাওয়ায় ৩/৪জন সিনিয়র আইনজীবী ও ৫/৭ জন বিচার প্রার্থী লিফটে প্রায় আধা ঘন্টা লিফটে আটকা ছিলেন। ওই সময় প্রায় সবাই ভয় আতংকে কান্না-কাটি শুরু করেন।
এব্যাপারে লিফট সরবরাহকারী সাবেক এক সংসদ সদস্যের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দি ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড আর্কিটেকট এর অফিসে (০২৯৫৫৭১৪৯) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমানের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কিছুদিন পরপর লিফট বিড়ম্বনার শিকার হওয়ায় আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ায় তোলপাঁড় শুরু হয়েছে আদালতের সর্বত্র। এর দ্রুত সমাধান আশা করছেন আইনজীবিরা।
উল্লেখ্য, গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের ২০ নভেম্বর ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে দি ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড আর্কিটেকট নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। কয়েক দফা সময় বৃদ্ধির পর ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ভবনটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।