দেশবাসীকে করোনাভাইরাসের মহামারীতে সাবধান ও সচেতন থাকতে বলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজায় তার সঙ্গে দলের শীর্ষ ৭ নেতা দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। সন্ধ্যায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির শীর্ষ ৭ নেতা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান।
ফখরুলের সঙ্গে যাওয়া অন্য নেতারা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।
সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ফখরুল বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এ সময় চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে- এমন অবস্থায় অন্তত কিছুদিন উনার (খালেদা জিয়া) কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ যেন উনার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে না পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এই সময়ে তার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
ফখরুল বলেন, আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে শুকরিয়া আদায় করেছেন।
দুই শর্তে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া যদি রাজনীতি করেন, সে ক্ষেত্রে শর্ত ভঙ্গ হবে এবং তা বাতিল হয়ে তাকে আবারও কারাগারে যেতে হবে- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ প্রসঙ্গে আমরা এখন যাব না। বিষয়টি আমাদের আইনজীবীরা দেখবেন। এটা নিয়ে আমরা পরে বসব।
এ দিকে বিএনপিপন্থী একটি চিকিৎসক দলও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ফিরোজায় গেছে। এরা হলেন- প্রফেসর ডা. এফএফ রহমান, প্রফেসর ডা. রজিবুল ইসলাম, প্রফেসর ডা. আবদুল কদ্দুস, প্রফেসর ডা. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিন ও প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দুই বছরেরও অধিক সময় কারাগারে বন্দি থাকার পর দুই শর্তে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত হলে বুধবার বিকালে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বুধবার বিকাল ৫টা ১৬ মিনিটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ফিরোজায় দীর্ঘ ৭৭৫ দিন পর প্রবেশ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে মঙ্গলবার তার মুক্তির বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার বিকাল ৪টা ১২ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে বের হন খালেদা জিয়া। সেখান থেকে তিনি সরাসরি গুলশানে নিজ বাসভবন ফিরোজায় যান।
খালেদা জিয়াকে ঢাকা মেট্রো-ভ ১১-০৬৯২ নিশান পেট্রল গাড়িতে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ পরিবার সদস্যরা বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গে চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঁচটি গাড়ি ও মাইক্রোবাসও ছিল। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে যেতে অনেক বেগ পেতে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া।
প্রথমে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হলেও গত বছর ১ এপ্রিল থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আইনজীবীরা গত দুই বছরে বহুবার আদালতে গেছেন, কিন্তু জামিন হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে মার্চের শুরুতে খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার খবর আসে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।