বালিশ দুর্নীতি : ৩৩ প্রকৌশলীকে দুদকে তলব

বহুল আলোচিত ‘বালিশ দুর্নীতি’র ঘটনায় ৩৩ প্রকৌশলীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তলব করা প্রকৌশলীদের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক সৌকত আকবর ও উপপ্রকল্প পরিচালক মো: হাসিনুর রহমানসহ প্রকল্পটির চার কর্মকর্তা রয়েছেন।
তাদেরকে কমিশনে আগামী ৬, ৭, ১১, ১২ ও ১৩ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপপরিচালক মো: নাসির উদ্দিনের পাঠানো নোটিশে তাদের তলব করা হয়।

৬ নভেম্বর যাদের তলব করা হয় তারা হলেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো: তারেক, তাহাজ্জুদ হোসেন, মো: মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী মো: কামারুজ্জামান, মো: আবু সাঈদ ও মো: ফজলে হক।
৭ নভেম্বর তলব করা হয়, রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম জিল্লুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশল মো: শফিকুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দি, মো: শাহীন উদ্দিন ও মো: জাহিদুল করিমকে।
১১ নভেম্বর যাদের তলব করা হয় তারা হলেন, রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: নজিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: শফিকুর রহমান, পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ চন্দ্র সাহা, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম, মো: রওশন আলী, রাজশাহী সার্কেলের উপসহকারী প্রকৌশলী মো: আহসানুল হক, খোরশেদা ইয়াছরিবা।

১২ নভেম্বর যাদের তলব করা হয় তারা হলেন, রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নুরুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী মো: আলমগীর হোসেন, শাহনাজ আক্তার, পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো: শফিউজ্জামান ও মো: রওশন আলী এবং রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মকলেছুর রহমান।

১৩ নভেম্বর যাদের তলব করা হয় তারা হলেনÑ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক মো: শওকত আকবর, উপপ্রকল্প পরিচালক মো: হাসিনুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো: মাহবুব রহমান, মো: মেহেদী হাসান এবং পাবনা গণপূর্ত বিভাগের মো: রফিকুজ্জামান।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বালিশকাণ্ডসহ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে গত ১৭ অক্টোবর দুদক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। দলের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো: আতিকুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।
রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিনসিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ভবনে উত্তোলন কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৯ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা, আর সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা দেখানো হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের কথা উঠে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪ জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়।

গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিক ‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলার আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০তলা আটটি ও ১৬তলার একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর ভবনে বালিশ ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।

প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনা দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। আর খাট ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা।
এ রকম টেলিভিশন, ওয়ারড্রোব, বেড, বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।

Share this post

scroll to top