সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ড্যাশ-৮ রানওয়ে থেকে ছিটকে স্টপওয়েতে

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমানের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ অবতরণের পরই রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরত্বে চলে যাওয়ার ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার রাতেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গঠিত তদন্ত কমিটি ড্যাশ-৮ ফ্লাইটের বিদেশী পাইলট ক্যাপ্টেন ইয়ারকিং এবং ও ফার্স্ট অফিসার মাহমুদ দাসের ডোপ টেস্ট (প্রস্রাবে মাদক পরীক্ষা) করে। তবে তাদের দু’জনের রিপোর্টই স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। তার পরও সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসারকে কোনো ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্ব না দিয়ে বিশ্রামে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত শুক্রবার বিকেলে ৪৬ জন যাত্রী নিয়ে বেলা ৫টা ৪৪ মিনিটে বিমানের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটি নির্ধারিত জায়গায় না থেমে রানওয়ের শেষ সীমানার বাইরে স্টপওয়ে এলাকায় গিয়ে থামে। এতে ওই বিমানে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তারক্ষীদের সহায়তায় পরবর্তীতে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সুশান্ত দত্ত ঘটনার রাতে নয়া দিগন্তকে বলেছিলেন, যখন বিমানটি অবতরণ করে তখন রানওয়ে এলাকা বৃষ্টিবিঘিœত ছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে রানওয়ে থেকে এয়ারক্রাফটটি ১০ মিটারের মতো দূরের স্টপওয়ে এলাকায় চলে গিয়েছিল। এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। রাতেই আবার যাত্রী নিয়ে উড়োজাহাজটি স্বাভাবিকভাবে ঘুরিয়ে পাইলট ঢাকার উদ্দেশ চলে গেছেন বলে জানান তিনি।

তবে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, যদিও এয়ারক্রাফটেরর কোনো ক্ষতি হয়নি; তার পরও নিয়ম অনুযায়ী এয়ারক্রাফটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই ফ্লাইট ঢাকায় ওড়ার কথা ছিল। কিন্তু পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসার কোনো নিয়ম না মেনে ঢাকায় চলে আসেন। এ কারণে সদ্য নিয়োগ পাওয়া পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন ওই পাইলট ও ফার্স্ট অফিসারকে আপাতত কোনো ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত তাদের কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেয়া হয়নি।
গতকাল সোমবার রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, মূলত সেদিন সৈয়দপুর এয়ারপোর্টের ঘটনাটি মিডিয়াতে অন্যভাবে এসেছে। আসলে রানওয়ের বাইরে চলে যায়নি। উড়োজাহাজটি রানওয়ের ভেতরেই ছিল।

প্রতিটি বিমানবন্দরেই রানওয়ের শেষসীমানায় স্টপওয়ে থাকে। স্টপওয়ের অল্প কিছু ভেতরে গিয়েছিল। পাইলট এবং ফার্স্ট অফিসারকে ফ্লাইট অপারেশন থেকে বিরত রাখা হয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা ঢাকায় ফিরে আসার পর দেরি না করে ওই রাতেই তাদের দু’জনেরই ডোপ স্টেস্ট করানো হয়েছে। রিপোর্টে অস্বাভাবিক কোনো কিছু মেলেনি।

তিনি বলেন, ওই সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। তারা ল্যান্ড না করলেও পারত। ফুয়েল ছিল। ফেরত এলেই হতো।
তাদের নিয়ম অনুযায়ী ঠিকই ছিল। ভিজিবিলিটি (দৃশ্যমান) ছিল। তারা করতে পারে। সিভিল এভিয়েশন থেকে কি কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বিমানের এমডি বলেন, এটা দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনেরই। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই পাইলট ফ্লাইট কি পরিচালনা করতে পারবে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো ইনসিডেন্টে পড়ে তার কিন্তু স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগে। সাইক্লোজিক্যালি একটা ইমপ্যাক্ট থাকে যে আমি মনে হয় এটা ভুল করলাম। মানসিক কারণে যাতে তারা চাপে না থাকে সে কারণে রেস্টে আছেন। ওই কমিটিতে বিমানের একজন প্রতিনিধি আছেন। আমাদের যেটা অভ্যন্তরীণ সেগুলোর কাজ আমরা ওই সময় করে ফেলেছি। এগুলোতে অ্যাবনরমাল কোনো কিছু নেই। পাইলট ইউরোপিয়ান বলে জানান তিনি।

Share this post

scroll to top