কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার সর্বোচ্চ টাকা, বিপুল সোনা-রূপা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স সিন্দুক থেকে এবার এক কোটি ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৮ টাকা পাওয়া গেছে। যা দানবাক্সগুলো থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। শনিবার সন্ধ্যায় গণনা শেষে এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক এবার তিন মাস ১৩ দিন পর খোলা হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি সিন্দুক খোলা হয়।

সিন্দুকগুলো খোলার পর সবার চোখ যেন কপালের উঠার অবস্থা। সিন্দুক থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকার হাজার হাজার কচকচে নোট। পরে সিন্দুক থেকে এসব টাকা বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় গণনার কাজ। গণনা চলে দিনব্যাপী। গণনার পর হিসাবে আসে টাকার পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

শুধু কি টাকাই পাওয়া গে? টাকার ভাঁজে ভাঁজে ছিল স্বর্ণেছের চাঁদ-তারা, রুপার চাঁদ-তারা, অলঙ্কারাদি ইত্যাদি। সেই সাথে বিদেশি মুদ্রা। এইসবের অর্থ মূল্য অর্ধ কোটি টাকার পরিমাণ হবে বলে গণনার কাজে জড়িত অনেকে ধারণা দেন।

এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ জুলাই দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন এক কোটি ১৪ খ ৭৪ হাজার ৪৫০ টালাকা পাওয়া গিয়েছিল।

এবার টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ৬০ জন ছাত্রশিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর মো. আল কামাহ তমাল, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যংকের এজিএম অনুপ কুমার ভদ্র প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন।

এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো. আসাদ উল্লাহ টাকা গণনার কাজ পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।

টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে দেখার জন্য শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান। পাগলা মসজিদের দানবাক্সে টাকা পয়সা স্বর্ণালঙ্কার দান করা ছাড়াও প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটিতে হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।

লোকজনের ধারণা, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূরণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। শুধু মুসলিমরাই নন অন্য ধর্মেও মানুষেরাও এখানে দান করেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার এক কোটি ৫০ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৮ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।

এছাড়া এবার ডলার, রিয়ালসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও অন্যবারের চেয়ে এবার পরিমাণে বেশি পাওয়া গেছে বলে মোস্তফা জানান।

এর আগে ২০১৮ সালের ৬ জানুয়ারি দানবাক্সগুলো থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। সর্বশেষ গত ১৩ জুলাই এক কোটি ১৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

Share this post

scroll to top