ভুল পথে এগোচ্ছে তুরস্ক রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব করে : যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযানকে ‘অপ্রত্যাশিত’ আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার বলেছেন, ওই অঞ্চলের নিরাপদ জোনে রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে টহল দেয়ার চুক্তি সম্পাদন করে তুরস্ক ভুল পথে এগোচ্ছে। ব্রাসেলসে ন্যাটো বৈঠকের প্রাক্কালে জার্মান মার্শাল ফান্ডের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে তুরস্ক ওয়াশিংটনকে একটি মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরপরই তুরস্কের বাহিনী সেখানে প্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ওই অভিযান থামিয়ে অস্ত্র বিরতি সম্পাদনে সাহায্য করে। গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তুরস্ক এই আশ্বাস দিয়েছে যে এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে।

ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্র বিরতিকে দারুণ ফলাফল বলে বর্ণনা করেছেন, তার ঠিক একদিন আগেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান রাশিয়ার সাথে একটি পৃথক চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী তুরস্ক ও রাশিয়ার সেনারা সীমান্ত এলাকায় যৌথ টহল দেবে।

সিরিয়ার কুর্দি গেরিলারা তুরস্কের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকটি অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মঙ্গলবার রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগর উপকূলবর্তী সোচি শহরে পুতিন ও এরদোগানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তার আওতায় কুর্দি গেরিলারা এসব অবস্থান ছেড়ে দিলো।

কুর্দি গেরিলাদের প্রত্যাহারের পর এসব এলাকায় সিরিয়ার সরকারি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, কুর্দি গেরিলারা সীমান্তের বেশকিছু অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সংস্থার প্রধান রামি আব্দুর রহমান জানান, তুরস্কের সীমান্তবর্তী বহু এলাকায় এখনো কুর্দি গেরিলা মোতায়েন রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তুরস্কের সাথে সিরিয়ার প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

রাশিয়ার অন্যতম বার্তাসংস্থা রিয়া নিউজও সীমান্ত থেকে কুর্দি গেরিলা প্রত্যাহারের খবর দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, তুরস্ক সীমান্ত থেকে সিরিয়ার ৩২ কিলোমিটার ভেতরে কুর্দি গেরিলারা সরে গেছে।

ক্ষুব্ধ ইসরাইল : সিরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব সেনা অপসারণের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইল মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের কারণে ইরান লাভবান হয়েছে। ট্রাম্পের সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ইসরাইল বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক অর্থে ইসরাইলসহ তার মিত্র দেশগুলোর প্রতি ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে। এর কারণে আইএসের পুনরুত্থান ঘটতে পারে।’

অ্যামনেস্টির অভিযোগ : গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়া থেকে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে। ওই ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, কখনো বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে, কখনো আবার হুমকি কিংবা কৌশলে ‘স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার’ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে তুরস্কের দাবি কয়েক লাখ শরণার্থী স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় ফিরে গেছে। তবে অ্যামনেস্টি এই দাবিকে ‘অসৎ’ আখ্যা দিয়েছে।

সিরিয়ায় আট বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির প্রায় ৩৬ লাখ শরণার্থী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী সহায়তায় ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ৫২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি করে আঙ্কারা। তবে সিরীয় শরণার্থীরা ক্রমেই তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠছে। তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ৩ লাখ ১৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী স্বেচ্ছায় সিরিয়ায় চলে গেছে।

শরণার্থীদের একাংশ বলেছেন, তাদের একটি রেজিস্ট্রেশনের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। এর বিনিময়ে তাদের একটি কম্বল দেয়া হয়েছে। কতজন শরণার্থীকে এভাবে জোর করে ফেরত পাঠানো হয়েছে তার কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য অ্যামনেস্টির কাছে নেই। তবে বিপুলসংখ্যক মানুষকে এভাবে ফেরত পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। সূত্র : এএফপি ও রয়টার্স।

Share this post

scroll to top