এসডিজি বাস্তবায়ন : ৫০ সূচকের ২৬টির অবস্থাই খারাপ, সঠিক পথে ছয়টি

জাতিসঙ্ঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাবায়নের ক্ষেত্রে গত চার বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি হতাশাজনক। এসডিজির বড় ছয় অভীষ্টের ৫০ সূচকের মাত্র ছয়টি সঠিক পথে রয়েছে। নির্ধারিত সময় ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য পূরণ হবে বলে আশা করা হলেও ২৬টি সূচকের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। ভালো নয় অবশিষ্ট ১৮টি সূচকের অবস্থাও। এসব সূচকের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এখন থেকেই বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল শনিবার এসডিজি বাস্তবায়ন শুরুর চারবছর উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে নাগরিক প্লাটফর্ম আয়োজিত দিনব্যাপী নাগরিক সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে হতাশার এ চিত্র।

নাগরিক প্লাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতিসঙ্ঘ আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো, রাশেদা কে চৌধুরী, আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ প্রমূখ। দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালায় পৃথক ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। প্লাটফর্মের নেতা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. মোশতাক আর চৌধুরী, শাহীন আনাম, আসিফ ইব্রাহিম, প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান, ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমূখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যের চারটি সূচকের মধ্যে তিনটির লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে না মন্তব্য করে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে আট সূচকের একটিও কক্ষপথ্যে নেই। শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জনে ১০টি সূচকের মধ্যে খুব খারাপ সাতটি সূচকে। বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হলে এ লক্ষ্যের তিনটি সূচকের পরিস্থিতি ভালো হতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসডিজি বাস্তবায়নের চার বছর পার হলেও অগ্রগতি মূল্যায়নে এখনো বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে তথ্যের ঘাটতি। যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার ভিত্তিতে অধিকাংশ লক্ষ্য ও সূচকেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হতাশাজনক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসডিজির মোট ১৭ অভীষ্ঠের মধ্যে প্রধান ছয়টি অভীষ্ঠ বাস্তবায়নে ৬৮ লক্ষ্য ও ৯৫ সূচক বেধে দেওয়া হলেও বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচকের অগ্রগতির তথ্য বাংলাদেশে নেই। আবার বেশ কিছু লক্ষ্য ও সূচক বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্তও নয়। শিক্ষা, শোভন কর্ম, অসমতা, জলবায়ু, শান্তি ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়ন অংশিদারিত্ব সংক্রান্ত ছয় অভীষ্টের মাত্র ৩৮ লক্ষ্য ও ৫০ সূচকের অগ্রগতির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার হার ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এমডিজি বাস্তবায়নকালের তুলনায় এসডিজি সময়কালে শিক্ষার হার বেড়েছে। তবে শিক্ষা সমাপ্তি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি, স্বাক্ষতার হার বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত, প্রযুক্তি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার মতো সূচকে উন্নতি করতে হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

২০১৭ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে এর হার ছিল ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এ সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশে। তবে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বৈষম্যও বাড়ছে। ১৯৯১ সালে দেশের দরিদ্রতম ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ সম্পদ থাকলেও বর্তমানে ১৩ দশমিক ০১ শতাংশে নেমে এসেছে।

উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, স্যানিটেশনের অভাব ও পানির অভাবসহ অনেক কিছুর অভাবের মূলে রয়েছে দারিদ্র্য। অনেকেই বলছেন, বৈষম্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরাও সেটা স্বীকার করছি। তিনি বলেন, সবার আগে দারিদ্র দূর করতে হবে। তারপর দূর করতে হবে বৈষম্য। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে তথ্য ঘাটতির পাশাপাশি অর্থায়নেও সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। লক্ষ্য পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, এসডিজি অর্জনে তথ্যের ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নয়নের সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয়করণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top