আকাশ থেকে পড়া হাইড্রোজেন বোমার সন্ধানে

১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু বোমা বহনকারী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল নর্থ ক্যারোলাইনা রাজ্যের এক খামারে। সেই বোমা খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করতে ডাক পড়েঝিল সেসময়ের বিমান বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেলের। বিবিসির এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে সে সময়ের সেই অভিজ্ঞতার কথা।

জ্যাক রেভেল জানান, সেদিন ফোনের শব্দে জ্যাক রেভেলের ঘুম ভেঙেছিল বেশ ভোরে। ঘড়িতে সময় পাঁচটা কি ছয়টা তখন। টেলিফোন করেছেন তার বস।

১৯৬১ সালের জানুয়ারি মাস। জ্যাক রেভেল তখন মার্কিন বিমানবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট। থাকেন ওহাইওতে। কাজ করেন বিমানবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, অর্থাৎ বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলে।

পেশাগত কাজে যখন কেউ এভাবে ফোন করেন, তখন কিছু কোড নেম এবং কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেই দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। কারণ আমার বস সেদিন কোনো কোড নেম বা কোড ওয়ার্ড ব্যবহার না করে সরাসরি আমার নাম ধরে সম্বোধন করলেন। তিনি বললেন, জ্যাক, আমি তোমাকে আমি একটা সত্যিকারের কাজে পাঠাচ্ছি এবার।

জ্যাক রেভেলের কোন ধারণা ছিল না, কী কাজে যাচ্ছেন তিনি। খুব দ্রুত তৈরি হতে হয়েছিল। এরপর ছুটে যান কাছের এক বিমান ঘাঁটিতে। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল একটি সামরিক বিমান। অপেক্ষায় ছিলেন বিমানবাহিনীর এক পাইলটও।

যেভাবে এই বিমানটির উড্ডয়নের জন্য সব আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়েছিল, তাতে পাইলটের মনে হয়েছিল, অতি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে যাচ্ছেন লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটি কী জানতে চেয়েছিলেন পাইলট।

আমি বিমানে চড়ার আগেই আমার সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন। এটা সচরাচর ঘটে না। নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটছে। পাইলট আমার কাছে জানতে চাইছিলো বিষয়টা কী। আমি বললাম, এটা খুবই গোপনীয় ব্যাপার, বলা সম্ভব নয়। ঘটনাটি নিয়ে এরকম কঠোর গোপনীয়তার দরকারও ছিল। কারণ বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়ে যেত দুনিয়া জুড়ে।

দুটি পরমাণু বোমা নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনীর এক যুদ্ধ বিমান। আকাশে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানটি পড়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার গোল্ডসবোরোতে। লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেলের কাজ হবে তার দলকে নিয়ে মাটিতে পড়া পরমাণু বোমা নিষ্ক্রিয় করা।

বিকল বোমারু বিমান

২৩ জানুয়ারি, ১৯৬১ সাল। সেমুর জনসন বিমানবাহিনী ঘাঁটি থেকে আকাশে উড়েছিল বি-৫২ বোমারু বিমান। সেটিতে বহন করা হচ্ছিল দুটি পরমাণু বোমা। মাঝ আকাশে বিমানটিতে রিফুয়েলিং বা জ্বালানি ভরার দরকার হয়। একটি ট্যাংকার বিমান আসে বি-৫২ বোমারু বিমানে জ্বালানি ভরতে। কিন্তু তখনই ট্যাংকার বিমানের পাইলট বি-৫২ বোমারু বিমানকে এ বলে সতর্ক করে দেয় যে তাদের একটি ডানা দিয়ে তেল পড়ছে। তখন রিফুয়েলিং এর চেষ্টা বাদ দিয়ে বি-৫২ বিমানকে জরুরী অবতরণের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

বিমানের একটি ডানা দিয়ে গল গল করে পড়ছিল জ্বালানি তেল। এটি যখন নর্থ ক্যারোলাইনার একটি বিমান ঘাঁটিতে জরুরি অবতরণ করতে যাচ্ছিল, ততক্ষণে এর একটি ডানা ভেঙে পড়ে।

মাঝ আকাশেই বিমানটি তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গোল্ডসবরোতে একটি কৃষি খামারে পড়ে বিধ্বস্ত হয়।

বিমানে ছিল পাইলটসহ মোট আট জন ক্রু। এদের মধ্যে তিনজনই নিহত হন। বাকিরা নিরাপদে বিমান থেকে নিজেদের ‘ইজেক্ট’ করতে সক্ষম হন। প্যারাস্যুটে তারা নীচে এসে নামেন।

কিন্তু বিমানে যে দুটি শক্তিশালী পরমাণু বোমা ছিল, সেগুলোর কী হলো?

ব্রোকেন অ্যারো
সামরিক পরিভাষায় এ দুর্ঘটনাকে উল্লেখ করা হচ্ছিল ব্রোকেন অ্যারো বলে। ২৫ বছর বয়স্ক লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল বিমানবাহিনীর একপ্লোসিভ অ্যান্ড অর্ডন্যান্স ডিসপোসাল টিমকে নিয়ে পৌঁছালেন দুর্ঘটনাস্থলে। তিনি ছিলেন পুরো ইউনিটের অগ্রবর্তী দলের নেতা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে যা দেখা গেল, তাতে তাদের রক্ত হিম হয়ে গেল। বিমানটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে আঝে অনেকখানি জায়গা জুড়ে। বিমানটির ইঞ্জিন, লেজ পড়ে আছে নানা জায়গায়। পুরো দৃশ্যটি ছিল আমাদের কল্পনারও বাইরে।

বি-৫২ বিমানটিতে ছিল দুটি থার্মো নিউক্লিয়ার বোমা। বিমানটি যখন ভে১ে পড়ছিল, তখন এই দুটি বোমা বিমানটির বোমা রাখার যে বিশেষ প্রকোষ্ঠ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।

দুটি বোমার সঙ্গেই ফিট করা আছে প্যারাস্যুট। যদি কখনো দুর্ঘটনার শিকার হয় এ প্যারাস্যুট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে ধীরে ধীরে বোমা দুটিকে মাটিতে নামিয়ে আনার কথা।

কিন্তু লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল এবং তার দলের কেউ নিশ্চিত নয়, বোমা দুটি মাটিতে পড়ার পর তখন সেগুলো কী অবস্থায় রয়েছে?

দুটি বোমার একটির প্যারাসুট প্যাক খুলে গিয়েছিল। কাজেই সেটি বেশ ধীরে ধীরে মাটিতে এসে নামে। বোমাটি মাটিতে পড়ার পর প্রায় ১৫ হতে ১৮ ইঞ্চি মাটির গভীরে গেঁথে যায়। একটা কৃষিজমির মাঝখানে বোমাটিকে দেখাচ্ছিল ওয়াশিংটনের কোন মনুমেন্টের মতো। এটা দেখতে অনেকটা একটা বর্জ্য ফেলার বিন বা পাত্র, তার মতো। চার-পাঁচ ফুট চওড়া, দশ-বারো ফুট উঁচু, শেষ মাথায় একটা লেজের মতো। লেজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্যারাসুটটি। একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, এটা কী? আমি বললাম এটা একটা বোমা!

জ্যাক সেখানে গিয়েই প্রথমে চেক করে দেখলেন বোমার সেফটি সুইচের অবস্থা। সেটি অন হয়নি, অর্থাৎ বোমাটি নিরাপদই আছে। সব নিয়ম মেনে জ্যাক সেটি বোমা থেকে বিচ্ছিন্ন করলেন।

পরে এটিকে একটি ট্রাকে করে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বোমাটির বেলায় কাজটা অত সহজ ছিল না। সেখানে ঘটেছিল ভিন্ন ঘটনা।

দ্বিতীয় বোমার ক্ষেত্রে প্যারাস্যুটটি ঠিকমত খোলেনি। প্রায় সাতশো মাইল বেগে এসে এটি পড়ে মাটিতে। যেখানে এই বোমাটি পড়েছিল সেটি ছিল একটা কাদাময় জলাভূমির মতো। বোমাটি সেখানে সেই কাদা ভেদ করে ঢুকে পড়ে।

জ্যাক রেভেল এবং তার দলবল যখন দ্বিতীয় বোমাটির জায়গায় আসলেন, তখন বুঝতে পারলেন পরিস্থিতি কতটা গুরুতর।

তারা কী ধরনের বোমা উদ্ধারে কাজ করছিলেন সেটা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এগুলো ছিল হাইড্রোজেন বোমা, থার্মো নিউক্লিয়ার বোমা। হিরোশিমা বা নাগাসাকিতে যুক্তরাষ্ট্র যে বোমা ফেলেছিল তার চেয়ে প্রায় হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী এ বোমা। কারণ এই বোমাগুলোতে ছিল দুটি করে পরমাণু অস্ত্র। একটি প্রাইমারি। আরেকটি সেকেন্ডারি।

প্রাইমারি ডিভাইস যেটা, সেটা নিউক্লিয়ার ফিশন বা পরমাণু বিক্রিয়ার সূচনা করে অ্যাটম বা পরমাণু ভাঙার মাধ্যমে। আর এর মাধ্যমে যে বিস্ফোরণের সূচনা ঘটে, সেটি তাপ, তেজস্ক্রিয়তা ও চাপ তৈরি করে। আবার এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুটি পরমাণুর মধ্যে সংযুক্তি ঘটিয়ে এটিকে অ্যাটম বোমা থেকে হাইড্রোজেন বোমায় রূপান্তরিত করা হয়।

জ্যাক রেভেল বলছিলেন, কী কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের।

এখন এই বোমাটি আমাদের খুঁজতে হচ্ছিল, এমন সব যন্ত্রপাতি দিয়ে, যেসব যন্ত্রপাতি থেকে কোন আগুনের ফুলকি বের হয় না। আমার সঙ্গে ছিল দশজন। আমরা সেখানে রীতিমত খনন কাজ শুরু করে দিলাম।

আমাদের এমন কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হচ্ছিল, যা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছিলাম। এরকম পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, আমাদের সামনে তো তার কোন টেক্সট বুক ছিল না, কোন চেকলিস্ট ছিল না। কারণ এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি বিশ্বে এর আগে কেউ হয়নি।

জ্যাক রেভেলের ভাষায়, বিশ্ব হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের এতটা কাছাকাছি আর আসেনি। এ হাইড্রোজেন বোমার দুটি অস্ত্রের কোনটিরই অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু আমরা জানতাম, যখন আমরা সেখানে কাজ করছিলাম, যে কোনো সময় এই অস্ত্র বিস্ফোরিত হতে পারতো। তবে এটা বলা কষ্টকর, বিস্ফোরণের কতটা কাছাকাছি ছিলাম আমরা। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, খুবই কাছাকাছি।

এর মাত্র কয়েক মাস আগেই পরমাণু অস্ত্র নিয়ে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। পরমাণু অস্ত্র লাগানো ছিল এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রে আগুন ধরে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পরও ডাক পড়েছিল জ্যাক এবং তার টিমের। দুর্ঘটনাকবলিত মিসাইলটি নিরাপদ করার এবং পরিচ্ছন্ন করার দায়িত্ব পড়েছিল তাদের ওপর।

কিন্তু এবারের ঘটনা একেবারে ভিন্ন। এখানে তাদের দিনের পর দিন কাজ করতে হচ্ছিল অস্ত্রটির টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া একেকটি অংশ নিয়ে।

যখন বোমাটি মাটির ভেতরে প্রবেশ করে, প্রায় ৫০ ফিট গভীরে ঢুকে গিয়েছিল। এর খোলস ভেঙে ভেতরের কলকব্জা বেরিয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে কিছু কিছু যন্ত্রপাতি তো খুবই বিপদজনক।

আমাদের কাছে সে সময় নিজেদের রক্ষার মতো কোনো প্রটেকটিভ স্যুট ছিল না। তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করার কোনো যন্ত্র ছিল না। এমনকি খাবার পর্যন্ত ছিল না। আমাদের কফি আর ডোনাট খেয়ে থাকতে হচ্ছিল। তখন আবহাওয়া ছিল খুব ঠা-া। কোন কোন দিন তুষার পড়ছিল। তাপমাত্রা সবসময় ছিল হিমাংকের নীচে।

যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি। পরমাণু বোমা তৈরির অনেক গবেষণা চালানো হয়েছে এখানে।

আমরা খনন শুরু করলাম। মাটির তিরিশ ফুট নিচে গিয়ে দেখি সেখানে পানির স্তর। পানি উঠে সব ডুবে যাচ্ছিল। তখন আমাদের বহু পাম্প নিয়ে আসতে হয় এই পানি বের করে ফেলার জন্য। যখন আমরা অস্ত্রটির বিভিন্ন অংশ খুঁজে পাচ্ছিলাম, সেটি আমাদের খুঁজতে হচ্ছিল কাদার ভেতরে।

তারপর জ্যাকের টিমের একজন একটা জিনিস আবিষ্কার করলেন।

সার্জেন্ট ল্যারি ল্যাক আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, লেফটেন্যান্ট, আমি একটা জিনিস খুঁজে পেয়েছি। আর্মস সেফ সুইচটি আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি বললাম, গ্রেট! কিন্তু ল্যারি বললেন, গ্রেট নয়। এটা আন আর্মড। আমরা যতদূর জানি, এটা কোন ভালো খবর নয়। আমাদের শরীরে ঘাম দেখা দিল।” তারা খনন অব্যাহত রাখলেন। তারপর তারা এই হাইড্রোজেন বোমার যে নিউক্লিয়ার কোর, বা মূল অংশ, সেটি খুঁজে পেলেন।

বোমার প্রাইমারি অংশটিতে থাকে ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়াম। এই অংশটার বেড় হবে একটা ফুটবলের সমান। যখন এটি খুঁজে পাওয়া গেল, টিমের প্রধান হিসেবে আমার ওপর দায়িত্ব বর্তালো, এটিকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে আসার।

আমি তখন সেই বিশ-তিরিশ ফুট গর্তের মধ্যে দাঁডিয়ে। আমার শরীরে মিলিটারি ইউনিফর্ম। হাতে গ্লাভস। আমাদের কাছে আসলে কোন ধরনের প্রেটেকটিভ পোশাকই ছিল না। আমি দুই হাতে এই যন্ত্রটি তুলে আমার বুকের কাছে ধরলাম। এরপর সেই অবস্থায় একটা নড়বড়ে কাঠের মই বেয়ে সেই গর্তের ভেতর থেকে আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি উপরে উঠে আসলাম।এরপর যন্ত্রটি একটি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হলো সিমুর জনসন বিমান ঘাঁটিতে।

আট দিন ধরে অনেক তল্লাশি আর খননের পর তারা বোমাটির বেশিরভাগ অংশ খুঁজে পেলেন। কিন্তু একটা অংশ তখনো নিখোঁজ। সেকেন্ডারি নিউক্লিয়ার ডিভাইস’ তখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

পরে জ্যাক ও তার টিম ফেরত এলেন। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে আরও পাঁচ মাস ধরে খনন অব্যাহত রইলো। কিন্তু এই সেকেন্ডারি ডিভাইস আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত এই পুরো জায়গাটি মাটি দিয়ে ভরে কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পুরো এলাকাটি কিনে নিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। সেখানে পাঁচ ফুটের বেশি খনন করা নিষেধ।
ব্ল্যাড ক্যান্সার
লেফটেন্যান্ট জ্যাক রেভেল এবং তার সহকর্মীরা যে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করেছিলেন, সেটি কতটা শক্তিশালী, তা প্রত্যক্ষভাবে জানার সুযোগ হয়েছিল কয়েক মাস পরেই। ক্রিসমাস আইল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কয়টি পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালায়। জ্যাক রেভেলকে সেখানে নেওয়া হয়েছিল। ক্রিসমাস আইল্যান্ডে বিশটি পারমাণবিক পরীক্ষা দেখার সুযোগ হয় তার।

তিনি বলেন, ছবিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের যে দৃশ্য আপনি দেখেন, সেটা দেখে আসলে কিছুই বোঝা যায় না। কারণ আলোর ঝলকানি আর চাপ এবং শব্দ, এটা এমন এক অভিজ্ঞতা, যে সেখানে ছিল না, তার পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন।

জ্যাক রেভেল একদিন মার্কিন সামরিক বাহিনী ছেড়ে দেন। পরবর্তী জীবনে তিনি সফল এক পরিসংখ্যানবিদ হয়েছিলেন।

কিন্তু যে পরমাণু বোমা নিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন, তার একটা বিরাট মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। তিনি এখন বিরল এক ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।

অনেক ডাক্তার আমি দেখিয়েছি। তারা বিষয়টি সরকারকে জানিয়েছে। কিন্তু সরকার এটা স্বীকার করতে নারাজ যে পরমাণু বিকিরণের শিকার হওয়ার কারণেই আজ আমি এ রোগে আক্রান্ত। আমি বিমানবাহিনীতে যে কাজ করতাম সেটার কারণেই আমার আজ এই অবস্থা।

আর কিছুদিন পর আমার ৫০তম বিয়ে বার্ষিকী। আমি জানি না সেই অনুষ্ঠান করার সুযোগ হবে কি-না। যদিওবা হয়, তারপর আর কদিন থাকবো, সেটাও আমি জানি না।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top