আইপিএলে হেরেই চলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাতে ক্ষোভ বাড়ছে সমর্থকদের মনে। তার প্রমাণ পাওয়া গেল রোববাসরীয় ইডেনে। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে বদলার ম্যাচে কেকেআর ৫ উইকেটে হারতেই মাঠে পড়ল জলের বোতল। বেজার মুখ নিয়ে তাড়াহুড়ো করে স্টেডিয়াম ছাড়লেন শাহরুখ খানও। সিএসকে’র বিজয়রথ ছুটে চলেছে ধোনির নেতৃত্বে। আট ম্যাচ খেলে তারা জিতল সাতটিতে। ধোনি বাহিনী ১৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল। আর চিপকে যে পতন শুরু হয়েছিল দীনেশ কার্তিকদের, তা অব্যাহত রইল ইডেনে। শুক্রবার ঘরের মাঠে নাইটরা হেরেছিল দিল্লির বিরুদ্ধে। ফিরতি ম্যাচে সিএসকে’র কাছে পযুর্দস্ত হয়ে হারের হ্যাটট্রিক করে ফেলল নাইট রাইডার্স।
কোনো কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছিল না কিং খানের দলের। ক্রিস লিনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর মনে হয়েছিল কিং খানের দল ১৮০-১৯০ রান সহজেই তুলবে। কিন্তু ডেথ ওভারে নাইটরা ২৪ বলে করে মাত্র ১৯ রান। আর সেই কারণেই ১৬১ রানে আটকে যায় কেকেআর। তা সত্ত্বেও সুনীল নারিন, পীযূষ চাওলার দুরন্ত বোলিংয়ের জোরে জয়ের আশা জাগিয়ে তুলেছিল নাইটরা। শেষ দু’ওভারে সিএসকে’র দরকার ছিল ২৪ রান। নাইট সমর্থকরা গলা ছেড়ে কোরাস তুলেছিলেন গ্যালারিতে, ‘কেকেআর…কেকেআর…।’ কিন্তু ১৯তম ওভারে হ্যারি গার্নে ১৬ রান দিতেই তা বদলে হয়– ‘কেকেহার…কেকেহার…।’
প্রশংসা করতেই হবে চেন্নাই সুপার কিংসের দুই বর্ষীয়ান ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না ও রবীন্দ্র জাদেজার। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৪১ রান যোগ করেন। দু’বল বাকি থাকতেই জয়ের কড়ি জোগাড় করে নেয় চেন্নাই। এক রানে সুরেশ রায়নাকে লেগ বিফোর দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান। আর এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। রায়না ৩৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সাতটি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৪২ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন রায়না। প্রশংসা করতেই হবে জাদেজারও। ষষ্ঠদশ ওভারের চতুর্থ বলে সুনীল নারিনের নাকল বলে ধোনি লেগ বিফোর হওয়ার পর চাপে পড়ে গিয়েছিল চেন্নাই।
তখন দরকার ছিল ২৪ বলে ৪১ রান। ওই অবস্থায় জাদেজা কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করেন। বিশেষ করে ১৯তম ওভারে গার্নের বিরুদ্ধে পর পর তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে তিনিই চেন্নাইয়ের জয় নিশ্চিত করেন। জাদেজা ১৬ বলে পাঁচটি বাউন্ডারির সাহায্যে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। তবে ওপেনার শেন ওয়াটসন (৬) ব্যর্থ। শুরুটা ভালো করেও ফাফ ডু’প্লেসি ২৪ রানে আউট হন। অম্বাতি রায়াডুর সংগ্রহ মাত্র পাঁচ রান। আর যাঁর ব্যাটিং দেখতে চড়া রোদ উপেক্ষা করে গ্যালারিতে ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার ভক্ত, সেই মহেন্দ্র সিং ধোনিও মাত্র ১৬ রান করে ডাগ-আউটে ফেরেন। কেদার যাদবের সংগ্রহ ২০ রান।
কেকেআরের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার পিছনে মূলত চারটি কারণ রয়েছে– ১) অতিরিক্ত রাসেল নির্ভরতা। ২) দুর্বল ক্যাপ্টেন্সি ৩) ম্যাচ জেতানো পেসারের অভাব। ৪) কুলদীপ যাদবের অফ ফর্ম।
দেরিতে হলেও ক্রিস লিন ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। সাতটি চার ও দু’টি ছক্কার সাহায্যে তিনি ৩৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। লিন ছাড়া কেকেআরের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। সুনীল নারিন দু’রান করেন। কেকেআরের ১৬১ রানে আটকে রাখার ক্ষেত্রে চেন্নাইয়ের লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের বড় ভূমিকা রয়েছে। একাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে তিনি আউট করেন নীতীশ রানাকে (২১)।
চতুর্থ বলে তুলে নেন রবীন উথাপ্পার (০) উইকেট। তবে লিন পালটা আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিলেন। ১৪তম ওভারে জাদেজার বিরুদ্ধে পর পর তিনটি ছক্কা হাঁকান তিনি। কিন্তু ক্যাপ্টেন দীনেশ কার্তিক এবারের আইপিএলে একেবারেই ছন্দে নেই। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে কেকেআর শিবিরে জোর ধাক্কা দেন তাহির। তিনি আউট করেন লিনকে। কেকেআর ওপেনারটি ৫১ বলে করেন ৮২ রান। তার ইনিংসে রয়েছে সাতটি বাউন্ডারি ও ছ’টি ওভার বাউন্ডারি। পঞ্চম বলে আন্দ্রে রাসেল (১০) তুলে মারতে গিয়ে ধ্রুব সোরের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন।
ইমরান তাহির ৪ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়ে চারটি উইকেট তুলে নেন। দারুণ ফিল্ডিং করেছে সিএসকে। ফাফ ডু’প্লেসি একাই চারটি ক্যাচ ধরেন। কার্তিক ১৪ বলে করেন ১৮ রান। শুভমান গিল (১৫) গত ম্যাচে ওপেন করে বড় রান করেছিলেন। তাসত্ত্বেও কেন তাকে সাত নম্বরে নামানো হলো, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।