আরবরা এবার হারালো গোলান মালভূমি

ইসরাইল গোলান হাইটস বা গোলান মালভূমি সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করেছিল ৫২ বছর আগে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে। বলতে গেলে সম্পূর্ণ গোলান। সামান্য কিছু অংশ দখল করা বাকি ছিল। এবার এই অংশও জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। এত দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও পাশের সিরিয়া ও জর্ডানসহ আরব দেশগুলো কোনোভাবেই গোলান ফিরিয়ে আনতে পারেনি, বরং গত ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরাইলি ভূখণ্ডের স্বীকৃতি দিয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র। এদিন সংশ্লিষ্ট ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়া কি এখন এই ভূমি উদ্ধার করার বা ইসরাইলকে বাধা দেয়ার কোনো ক্ষমতা রাখে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন এর সরকার সিরিয়া এক ব্যর্থ রাষ্ট্র। অন্যের সহায়তা নিয়েই এখনো টিকে আছে।

সিরিয়া এক বিরান ভূমি এখন। জনে-বলে-সম্পদে-ইসলামী ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ এই দেশ বর্তমানে ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়িয়ে। গত সপ্তাহে ইসরাইল সিরিয়ার শিল্পাঞ্চলে অনেক বোমা ফেলেছে; ইরানি সেনাছাউনি ও অস্ত্রের ডিপোতেও বোমা হামলা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য সিরিয়াকে বলবীর্যহীন অক্ষম করে তোলা।

দক্ষিণ পশ্চিম সিরিয়ার একটি পাথুরে মালভূমি হচ্ছে গোলান। মাত্র ৪০ মাইল দূরে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। দক্ষিণ সিরিয়া দেশটির সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এটা একটি আদর্শ জায়গা। গোলান মালভূমি থেকে পানি প্রবাহিত হয় জর্ডান নদীতে যা ইসরাইলের পানি সংগ্রহের বড় উৎস। জায়গাটি উর্বর; এখানে নানা ধরনের ফল এবং বিশেষত আঙুরের চাষ হয়। পশুপালনও করা হয়ে থাকে। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে সিরিয়া এটি পুনর্দখল করার চেষ্টা করেও পারেনি। ১৯৮১ সালে ইসরাইল গোলানকে নিজের অংশ করে সিরিয়ান দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ হাজার লোককে বসতি করে দেয়। মরু অঞ্চলে বাঁচার জন্য পানি ও তেল দরকার। গোলান হাইটস এই দুটিতে ভরপুর।

অক্টোবর, ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে গোলান হাইটে ‘সিরিয়া আরব আর্মি’ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বুলেটও ব্যবহার করেনি। গোলান হাইটের উঁচু স্থানে ইসরাইলি পতাকা উড়ানো হলেও সিরিয়া সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। সিরিয়ার জনসাধারণ যেন কোনো বিক্ষোভ মিছিল করে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ে সে জন্য সিরিয়ার সরকারি বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ করছিল! ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে গোলান মালভূমির পতন দুঃখগাথায় ভরা। সরাসরি যারা যুদ্ধ করেছিল অনেক যোদ্ধা সেসব স্মৃতিচারণ করেছেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদের ঘনিষ্ঠজনেরা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিডিয়ায় করুণ বক্তব্য দিয়েছিলেন। আলজাজিরা টিভি চ্যানেল ধারাবাহিকভাবে এসব ডকুমেন্ট প্রচার করেছে।

এসব ডকুমেন্টে দেখা যায়, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসাদের বাবা ১৭ ঘণ্টা আগেই কুনিয়াত্রা প্রদেশের পতন ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেনাঅফিসারদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল এবং তখন সিরিয়ার সৈন্যরা কোনো কমান্ডার ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছিল। পরে সৈন্যদেরও ডেকে পাঠানো হয়। ইসরাইলি সৈন্যরা কোনো যুদ্ধ ছাড়াই কুনিয়াত্রায় প্রবেশ করে। এখন জানা যাচ্ছে, আসলে গোলান হাইটস ইসরাইলের কাছে ‘বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল’। ড. মাহমুদ জামে এই দাবি করেছেন। তিনি মিসরীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের বন্ধু। তিনি আরো দাবি করেন, ইসরাইল হাফিজ আল আসাদ ও তার ভাই রিফাতকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের চেক দিয়েছিল। ওই চেক সুইচ ব্যাংকে জমা করা হয়েছিল। ইসরাইল দাবি করে যে, গোলান হাইটস ইহুদিদের প্রমিজড ল্যান্ডের অংশ। তাই গোলান হাইটস থেকে সরে যাওয়া বা ১৯৬৭ সালের আগের সীমায় ফেরত যাওয়ার কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ইসরাইল মানতে পারে না।’

এখানে আরো একটি বিষয় জড়িত- হাফিজ আল আসাদ ১৯৭১ সালে ক্যু-এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নুরুদ্দিন আল আত্তাসীকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। সমালোচকরা বলেন, ক্ষমতার জন্যও ইসরাইল তখন সহায়তা দিয়েছিল। গোলানের বদলে বিত্ত ও ক্ষমতা লাভ করাই ছিল হাফিজের উদ্দেশ্য।

তারই পুত্র সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদও কি বাবার পদচিহ্ন অনুসরণ করছেন? তিনিও কি অপরাধজনক কাজকর্ম আড়াল দিতে গোলান মালভূমির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না? এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ ক্ষমতার জন্য লাখ লাখ মানুষ আত্মাহুতি দিচ্ছে, হাতছাড়া হচ্ছে গোলান। ওবামা আমল থেকেই বলা হচ্ছিল ‘জানোয়ার আসাদ’কে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে হবে। এই সে দিনও নিক্কি হ্যালি (জাতিসঙ্ঘে সাবেক মার্কিন দূত) বলেছেন, ‘যেকোনো মূল্যে আসাদকে যেতে হবে।’ আমেরিকানরা কেন এই আরাধ্য কাজ সমাধা না করেই বিদায় নিচ্ছে? এটাও কি গোলানের বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকা নয়? মিডিয়া তথ্য ফাঁস করেছে, বাশার আল আসাদের ক্ষমতায় থাকার বিনিময়ে ইসরাইল গোলান দখল করবে, ট্রাম্প গোলানের ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করবেন। মনে হচ্ছে, আসাদ যুগ যুগ ধরে সিরিয়ার ক্ষমতায় থাকবেন। কিন্তু সিরিয়া তো এখন এক মহাশ্মশান! সম্পদ ও মানুষ না থাকলে ‘বাদশাহী’ কী কাজে আসবে?

গোলান ইহুদিদের দখল ও হাতছাড়া হওয়াতে আরব রাজন্যবর্গ এই আরব ভূমির জন্য উদ্বিগ্ন নন। গোলানের মতো উত্তপ্ত বিষয় বাদ দিয়ে উপসাগরীয় মিডিয়াগুলো এখন ‘মুলার রিপোর্ট’, ‘ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান’ এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যস্ত। এসব মিডিয়া এখন ইরানের পর তুরস্কের এরদোগানকে ধরেছে কিছু পশ্চিমা দেশ ও বশংবদ নেতৃত্বকে খুশি করার জন্য। এক সাথে বসে একটু কফি খাওয়া, কিছু লেনদেন, কিছু অস্ত্র কেনা, কিছু সমর্থন ও মিডিয়ায় বক্তব্যের জন্য নতজানু হওয়া ইত্যাদি। তারা সিরিয়ায় রাশিয়া ও ইরানের উপস্থিতির সমালোচনা করেছেন, কিন্তু জেরুসালেম দখল, গাজায় অব্যাহত বোমাবর্ষণ, গোলান দখল, পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি নির্মাণ, জিনজিয়াং-এর মুসলমানদের দুর্দশা, কাশ্মিরি জনগণের অধিকার, রোহিঙ্গাদের বাঁচা-মরা, ফিলিপাইনের মরো মুসলমানদের স্বাধীনতা এসব বিষয়ে সোচ্চার নয়।

মনে হচ্ছে- ইসরাইল সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইসরাইল যে বলীয়ান হয়ে অর্ধশতাধিক মুসলিম রাষ্ট্রকে থোড়াই কেয়ার করছে; মুসলিম বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একের পর এক মুসলিমভূমি দখল করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, আরব দেশগুলো সেসব নিয়ে চিন্তা করার যেন সময় পাচ্ছে না। কিভাবে ব্রাদারহুড ও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করা যাবে এখন সে চিন্তাতে তারা নিমগ্ন।

সিরিয়ার বিষয়ে একটি পরিকল্পনা নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অগ্রসর হয়েছে বহু বছর ধরে। ট্রাম্প আমেরিকায় ক্ষমতায় এসেই যে সাতটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন সেখানে সিরিয়াও ছিল। সিরিয়ার বিমানবাহিনী ধ্বংস করাও তাদের একটি উদ্দেশ্য। ২০১৭ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ৫৯টি টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করার ফলে সিরিয়ার ১০০ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল এবং অন্তত ২০টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল। এই আক্রমণের নির্দেশ এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে। আমেরিকা ও ইসরাইলের আঁতাতের উদ্দেশ্য হলো, সিরিয়া যেন কোনোভাবেই গোলানে হামলা চালাতে না পারে। সে উদ্দেশ্যে পালাক্রমে সিরিয়ার বিমানবহরকে ধ্বংস করার কাজে মিসাইল ও বোমারু বিমান ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিরিয়ায় হামিমিম ও তারতুস সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০ মোতায়েন রয়েছে। রুশ দৈনিক ‘ইজভেস্তিয়া’ জানায়, ২০১৭ সালে যদি রাশিয়া টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করত, তাহলে রুশ-মার্কিন যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। ইরানের সংবাদ সংস্থা ‘তাসনিম’ জানিয়েছে, ২০১৭ সালে যে বিমানঘাঁটি থেকে হামলা চালিয়ে ইসরাইলি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছিল, সেই বিমানঘাঁটিতেই হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। সেখানে মার্কিন হামলা থেকে এটা স্পষ্ট যে, ওই হামলায় ইসরাইলের ইন্ধন ছিল সরাসরি। শুধু হামলা নয়, বরং ঘাঁটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ইসরাইল আমেরিকাকে উসকানি দিয়েছে। উল্লেখ্য বড় বড় হামলায় যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল রাশিয়ার কোনো ঘাঁটিতে আঘাত করেনি আর রাশিয়াও এ যাবৎ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে আঘাত হানেনি। এই দুটি দেশ নিজেরা যুদ্ধে জড়াবে না কিন্তু যুদ্ধরত অন্যান্য গোষ্ঠী ও দেশকে ইন্ধন জোগাবে মরণখেলার জন্য।

ইসরাইলে নির্বাচনের আগে গত মার্চ ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দলের নেতা গাবি আসকিনাজি, ইয়ার লাপিড, বেনী গাঞ্জ ও মোশে ইয়ালুন ঘোষণা দেন, গোলান হাইটস থেকে ইসরাইল পিছিয়ে আসবে না; বরং সেখানে তারা আরো দ্বিগুণ বসতি স্থাপন করবে এবং ইহুদি জনসংখ্যা বাড়াবে। তারা বলেছেন, সিরিয়ার বাশার আল আসাদের হাতে ভূমি হস্তান্তর করতে চান না যে নিজের জনগণের ওপর অত্যাচার চালায়।

জনাব নাজি মোস্তফা, ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের মুখপাত্র’ গত মার্চ মাসের শেষে সপ্তাহে তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সিকে জানান যে, বাশার আল আসাদ গোলান হাইটস ফেরত পাওয়ার জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালাননি।

অবস্থা দেখে মনে হয় দুনিয়াতে এখন ‘জঙ্গলের আইন’ শ্রেষ্ঠ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণা এমন এক ঘোষণা- যার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আহ্বান জানানো যায় বা জানানো হয়েছে। কিন্তু আরব বিশ্ব তো জেগে জেগে ঘুমিয়ে আছে। জাতিসঙ্ঘের সনদে বলা আছে, কোনো দেশ অন্য দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না। সনদের ভাষ্য, ÔAll Members shall refrain in their international relations from the threat or use of force against the territorial integrity or political independence of any state, or in any other manner inconsistent with the Purposes of the United Nations.’

শুধু কি তাই? যুক্তরাষ্ট্রের গোলান সংক্রান্ত ঘোষণা জাতিসঙ্ঘের একাধিক সিদ্ধান্তের বিপরীত। জাতিসঙ্ঘের ২৪২ নম্বর সিদ্ধান্তে ইসরাইলকে অবিলম্বে অধিকৃত এলাকা ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৬৭ সালে অধিকৃত এলাকা ছাড়তে হবে। ১৯৮১ সালেও ইসরাইল গোলান হাইটসে তার আইন প্রয়োগ ও প্রশাসনিক আইন বলবৎ করতে গেলে জাতিসঙ্ঘ ৪৯৬ নম্বর সিদ্ধান্তে তা নাকচ করে দিয়েছিল। মনে হচ্ছে- আমরা অন্ধকার যুগে ফিরে গেছি। তাই জোর যার মুল্লুক তার।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিভিন্ন ইস্যুতে ইসরাইল বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। ট্রাম্প আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে নিজের প্রয়োজনে ‘জেরুসালেম ঘোষণা’ দেন এখন ইসরাইলে নেতানিয়াহুর নির্বাচনে তিনি ‘গোলান ইসরাইলের’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে রিপাবলিকানরা যে ইসরাইলের বেশি প্রিয়, তার জন্য আর কোনো পরীক্ষা ট্রাম্পকে দিতে হবে না। ‘গোলান ঘোষণা’র আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পিউ আজগুবি বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, গড ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য (ইরানের হাত থেকে) ট্রাম্পকে পাঠিয়েছেন।’ কিন্তু কথা হলো গড যে পাঠিয়েছেন তা তিনি কিভাবে জানলেন? তিনি কি একজন মসিহ বা নবী? ইহুদিরা খ্রিষ্টানদের ঘৃণা করে। কেননা দাউদ আ: ও সোলাইমান আ:-এর ধর্মকে ত্যাগ করে তারা ঈসা আ:-এর ধর্ম গ্রহণ করেছে। অথচ এখন ইহুদিদের পরিত্রাণের জন্য খ্রিষ্টান ট্রাম্পের খুব প্রয়োজন। আসলে ধর্মের পাঠ ও রাজনীতির পাঠ শুধু ভিন্ন নয়, বিপরীতও।

দেখা যাচ্ছে, পম্পেউর ভাষ্য মতে ট্রাম্প একজন ‘স্বর্গীয় দূত’। মানে, দেবতার আসনে থাকায় তিনি যেকোনো জায়গা যে কাউকে দিতে পারেন অথবা ইচ্ছে করলে যে কারো কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতেও পারেন।’ এই ধারা অব্যাহত থাকলে তিনি যেকোনো আরব ভূমি যেকোনো সময় ইসরাইলকে ‘দান’ করতে পারেন। বলপূর্বক ইসরাইল তো সেই ভূমি যা ফিলিস্তিনিদের দেশছাড়া করে, উদ্বাস্তু বানিয়ে রাজনৈতিক ও সামরিক চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে নির্লজ্জভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সিরিয়ার প্রতিনিধি বাশার জাফরি, ট্রাম্পকে এক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলি সাপোর্টের জন্য বা নেতনিয়াহুকে সাপোর্ট করার জন্য ট্রাম্প নিজ দেশের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনা তাদের দিয়ে দিলে সব দিক দিয়ে উত্তম বিবেচনা হবে।

ইসরাইলে সাধারণ নির্বাচন সন্নিকটে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও। অবশ্য ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা নেতানিয়াহু ‘ট্রাম্প কার্ড’-এর কারণে বেশ শক্তিশালী। নির্বাচনে তাকে জয়লাভে সহায়তা করতে ট্রাম্প সঙ্কল্পবদ্ধ মনে হয়। লেবাননে শক্তিশালী হিজবুল্লাহর হাতে এখন রাসায়নিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইরানের স্থায়ী উপস্থিতির ব্যাপারেও ইসরাইল বিরক্ত ও সতর্ক। গোলানে ইসরাইলি ভূমি প্রসারিত হলে ইরান বেকায়দায় পড়বে। এখান থেকে পুরো এলাকার ওপর ইহুদিবাদীদের নজরদারি সহজ হবে। ‘ইরান যুদ্ধে’ ইসরাইলের এটা একটি কৌশলগত বিজয়ও বটে।

 

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top