রাফাল যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পাকিস্তানের পাইলটরা : মহা দুশ্চিন্তায় ভারত

অনেকদিন ধরেই ভারতের রাজনীতিতে বড় একটি রাম রাফাল। অস্ত্র সক্ষমতার কারণে নয়, বরং এ নিয়ে দুর্নীতি নিয়েই ভারতের রাজনীতিতে বেশ তোলপাড় ঘটে মাঝে মধ্যেই। ফলে ফ্রান্সের এ বিমানগুলো পেয়ে ভারতের যতটুকু আনন্দিত হওয়ার কথা, তার চেয়ে দুশ্চিন্তা মোটেও কম নয়। এর মধ্যেই আরেকটি খবর ভারতের সামরিক বাহিনী তথা ভারত সরকারকে ফেলে দিয়েছে মহা দুশ্চিন্তায়।

সম্প্রতি এআইএন অনলাইন ডট কম নামের একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে রাফাল বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর পাইলটরা। এ খবর শোনার পর থেকে ব্যাপক অস্বস্তিতে রয়েছে নয়াদিল্লি।

জানা গেছে, কাতারের বিমানবাহিনীর হাতে থাকা রাফাল যুদ্ধবিমানের সাহায্যে নিজেদের পাইলটদের এই বিমান চালানো শিখিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের নভেম্বরেই ফ্রান্সের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রশিক্ষণ। অথচ চির প্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তান থেকে আকাশ শক্তিতে এগিয়ে থাকার জন্য ভারত ভর করেছিল এই অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানের ওপরই।

এআইএন অনলাইন ডট কমের ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৭ সালের নভেম্বরে কাতারের হয়ে যে পাইলটরা রাফাল বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সদস্য। ভারতের মতোই রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করেছে কাতার।

রাফাল যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতি থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ২৪টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে কাতার। ২০১৭ সালে কাতার আরো এক ডজন রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে নতুন চুক্তি করে ফ্রান্সের সঙ্গে। প্রথম দফার ২৪টি যুদ্ধবিমানের জন্য চুক্তির অর্থমূল্য ছিল ৬৩০ কোটি ইউরো। সেই যুদ্ধবিমান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণ নিতেই কাতার থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিল পাইলটদের একটি দল। সেই দলেই ছিলেন পাকিস্তানি পাইলটরা।

এদিকে দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের যেসব কর্মকর্তা এখন ভারতে আছেন, তাদের কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা জানান, কাতার এয়ার ফোর্সের হয়ে পাকিস্তানি পাইলটরা রাফাল চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, এই রকম কোনো খবর তাদের কাছে নেই।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সবসময়েই পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে মোতায়েনও থাকেন পাকিস্তানি সেনা। জর্ডানের মতো দেশের কাছ থেকে সরাসরি সামরিক সহযোগিতা পেয়ে থাকে পাকিস্তান। এমনকি কিছুদিন আগেই ইসলামাবাদকে ১৩টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়েছিল জর্ডান।

বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের পর পাকিস্তানের যেসব যুদ্ধবিমান ভারতে হামলা চালাতে এসেছিল, তার মধ্যে জর্ডনের দেওয়া যুদ্ধবিমানও থাকতে পারে, এমন সন্দেহও রয়েছে ভারতের।

এদিকে বিভিন্ন সংবাদে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইসলামাবাদে পাক বায়ুসেনার সদর দফতরে গিয়েছিলেন কাতারের বিমানবাহিনীর প্রধান। সে সফরের পর পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রধান জানিয়েছিলেন, সামরিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীকে সহ রকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে কাতার।

ভারতের আশঙ্কার কারণ হচ্ছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেই ভারতে আসতে চলেছে রাফাল যুদ্ধবিমান। তার আগেই পাকিস্তানি পাইলটরা এ বিমান ওড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেললে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ রয়েছে ভারতের।

কারণ, ভারত এ বিমানে তার পছন্দসই কিছু পরিবর্তন করলেও কাতারের কেনা যুদ্ধবিমান ও ভারতের যুদ্ধবিমানের রেডার ব্যবস্থা দুই দেশের ক্ষেত্রেই এক। অত্যাধুনিক এ রেডার ব্যবস্থা থাকলে বিমান ওড়ানোর সময়েই পাইলটরা টের পেয়ে আকাশের বা সমুদ্রের কোথায় বিপদ লুকিয়ে আছে বা কোন জায়গা থেকে আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিপক্ষ।

এখন এই রেডার ব্যবস্থা পাকিস্তানের হাতে থাকলে ভারতের রাফাল আকাশে উড়লেই পাকিস্তানের সৈন্যরা তার অবস্থান জেনে ফেলতে পারবে খুব সহজেই।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট অংশুমান মইনকার বলেন, প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর সদস্যরা জেনে যাবে এই যুদ্ধবিমানের অস্ত্রব্যবস্থা কেমন। কতক্ষণ আকাশে উড়তে পারে। কী ভাবে এই বিমান অভিযান চালায়, এই সব কিছুই। অর্থাৎ, রাফাল হাতে থাকলে ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণের কৌশল কী হতে পারে, তা নিয়ে পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর কাছে আর কিছুই অজানা থাকবে না।

ফলে এত দাম দিয়ে কেনার পরও তা নিয়ে অতিরিক্ত কোনো সুবিধাই পাবে না ভারত। আগামীতে বিষয়টি দুই দেশের সামরিক শক্তিতে কতটুকু প্রভাব ফেলবে আপাতত ভারত তা নিরূপনেই ব্যস্ত।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top