জামিনের ও প্যারোল মধ্যে পার্থক্য কী?

বাংলাদেশে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপি বলছে, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া উচিত এবং তারা মনে করে বিষয়টি সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আবার সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীদের অনেকে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত শনিবার জামালপুরে এক অনুষ্ঠানে শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে সরকার বিবেচনা করবে। মূলতঃ এরপর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির সম্ভাবনার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। যদিও বিএনপি নেতারা মনে করেন, জামিনে মুক্তি পাওয়া তার খালেদা জিয়ার অধিকার।

মূলত সরকার ও বিএনপি দলের এমন আলোচনার প্রেক্ষিতেই অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, আসলে জামিন ও প্যারোলের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?

প্যারোল ও জামিনের মধ্যে পার্থক্য কী?
বিবিসির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এ প্যারোল ও জামিনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেছেন। এই দুটির মধ্যে বড় আকারের চারটি পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো হলো:

১. আবেদনের শর্ত : জামিন হলো কেউ যদি মামলার আসামী হয়ে থাকেন বা আসামী হয়ে আটক হয়ে থাকেন তখন তিনি আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে প্যারোল তখনই দেওয়া হয় যখন আসামী ইতোমধ্যেই আটক হয়ে কারাগারে আছেন কিন্তু বাইরে এমন কিছু ঘটলো যাতে তিনি বিধি মোতাবেক প্যারোল আবেদনের যোগ্য হন তাহলে তিনি আবেদন করতে পারেন।

২. অনুমোদন : জামিন হয় আদালতের নির্দেশে, কিন্তু প্যারোল হয় প্রশাসনিক আদেশে।

৩. জিম্মা : জামিন পাওয়া ব্যক্তি বাইরে স্বাধীন থাকবেন। তিনি কোনো আদালত বা পুলিশের জিম্মায় থাকবেন না। অপরদিকে প্যারোল পাওয়া ব্যক্তি পুরো সময় পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকেন।

৪. হাজিরা ও জেল : জামিনে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তি নির্ধারিত দিনে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হাজিরা দেন। আর প্যারোল পাওয়া ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময় পর পুলিশ কারাগারে নিয়ে আসবে।

উদাহরণ দিয়ে মনজিল মোরশেদ জানান, নিকটাত্মীয় কেউ মারা গেলে একজন বন্দী প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানাতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে তিনি একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাইরে যাবেন, কিন্তু পুরো সময় তিনি পুলিশের কাস্টডিতে (হেফাজতে) থাকবেন। পুলিশ তাকে স্কট করে রাখবে।

কোন ধরনের বন্দী প্যারোল পেতে পারে?
মনজিল মোরশেদ বলেন, যে কোনো ধরনের বন্দী, কয়েদী বা হাজতিই প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিবেচিত হতে পারেন। তিনি যে অপরাধের কারণে বা যে ধরন বা মেয়াদের শাস্তি ভোগরতই থাকুন না কেন, সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে (যেমন নিকটাত্মীয়ের জানাজা) তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন প্যারোলে মুক্তির জন্য। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় দূরত্ব ও স্থান বিবেচনা করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার আবেদন মঞ্জুর করতে পারেন।

যে কোনো মেয়াদের বন্দী প্যারোলের সুযোগ পেতে পারে?
মনজিল মোরশেদ এ ব্যাপারে বলেন, সাজা প্রাপ্ত হোক আর না হোক, আটক আছেন এমন যে কেউ এমন আবেদন করতে পারেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

প্যারোলের কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে?
একজন আবেদনকারী কত সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি পাবেন – সেটা নির্ভর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের ওপর। যেমন
ঢাকা কারাগারে আটক কারো বাবা মারা গেলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তাহলে সেখানে আসা যাওয়া ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে সরকার কত সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেবে তা ঠিক করবে। আবার তার বাবার জানাজা যদি বায়তুল মোকাররমে হয়, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই সে অনুযায়ী সময় পাবেন।

প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে যত নীতিমালা
কোন বন্দী প্যারোল পাবেন এবং প্যারোলের আওতায় তার সময়কাল কিভাবে দেখা হবে – তা নিয়ে একটি নীতিমালা আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এ নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ নীতিতে থাকা অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:

১. নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনা করে প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন;

২. নিকট আত্মীয় যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, সন্তান, আপন ভাই-বোন মারা গেলে প্যারোলে মুক্তি দেয়া যায়;

৩. আদালতের আদেশ বা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন সাপেক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে;

৪. প্যারোলে মুক্তি পেলেও সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় থাকতে হবে;

৫. কারাগারের ফটক থেকে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ বুঝে নেয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কারাগারে ফেরত দিতে হবে।
সূত্র : বিবিসি

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top