আর দুইদিন পর থেকেই শুরু হচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ফলে বাড়ছে সহিংসতার আশংকাও। এ অবস্থায় দেশজুড়ে গাড়ি মেরামত কারখানাগুলোতে চলছে অন্য রকম এক ব্যস্ততা। সেখানে বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী দরজা এবং বুুলেটপ্রুফ জানালা লাগানোর ব্যস্ততা বেড়েছে চোখে পড়ার মত।
আগামী নির্বাচনটিকে বিভিন্ন কারণে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুধু প্রার্থীরা নিজেদের প্রাণ নিয়েই আছেন চরম উৎকণ্ঠায়। অবশ্য শুধু প্রার্থীরাই যে নিরাপত্তা নিয়ে বিচলিত, তা নয়। পেছনে থেকে যারা রাজনীতির কলকাঠি নাড়েন, তারাও আছেন এ তালিকায়।
ভারতে নির্বাচন কমিশন অনেকটা শক্তিশালী হওয়াতে সেখানে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, অরাজকতার ঘটনা ঘটে তুলনামূলক কম। তারপরও প্রার্থী হত্যা, নির্বাচনী গাড়িবহরে হামলা, কার্যালয়ে হামলা, এমন ঘটনা ঘটে থাকে অহরহ। ফলে প্রার্থীরা এখন আর কোনো সুযোগ দিতে চান না।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের গাড়ি মেরামত কারখানাগুলোতে তাই এ ধরনের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে অনেকখানি। যেমন- জলন্ধরে বিশেষায়িত সাঁজোয়া যানের চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ শহরটির সঞ্জিত সোবতির কারখানায় এরই মধ্যে চারটি এসইউভি বুলেটপ্রুফ করা হয়েছে।
সোবতি বলেন, প্রতি নির্বাচনের আগেই এ ঘটনা ঘটে৷ গত শতাব্দীর আশির দশকে যখন পাঞ্জাবে সশস্ত্র হামলার ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল, তখন থেকে রাজনৈতিক নেতা ও অন্যান্য ভিআইপি ক্রেতাদের সাঁজোয়া যান সরবরাহ করে আসছেন বাবা। আর এবারের নির্বাচন, অন্য সব নির্বাচনের চেয়ে বড়। অন্য সব বড় ঘটনার মতো এই নির্বাচনকে ঘিরেও রয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা। ফলে রাজনীতিবিদরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান। গত কয়েক মাস ধরে আমরা তাই দিনরাত কাজ করছি৷
উত্তর পাঞ্জাবের পাশাপাশি, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রেও এমন বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরির ধুম লেগেছে।
জানা গেছে, ভারতে বর্তমানে এ ধরনের গাড়ির বাজার বছরে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের। বিভিন্ন গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বাজার এখন আকারে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। মাহিন্দ্র অ্যান্ড মাহিন্দ্র, টাটা মোটরসও বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য বুলেট-প্রুফ গাড়ি বিক্রি করে।
সোবতি জানান, একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে পুরোপুরি বুলেট ও বিস্ফোরণপ্রতিরোধী করে তুলতে ৭ থেকে ৭০ হাজার ডলারের মতো খরচ হতে পারে। এ কাজে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তাছাড়া, এমন গাড়ি রাস্তায় নামানোর অনুমতি নিতে সময় লাগে তার চেয়েও বেশি।
পাঞ্জাবের এক আইনপ্রণেতা বলেন, সাফল্যের সঙ্গে ঈর্ষাও আসে, যা আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। তখন শত্রু তো দূরের কথা, বন্ধুদেরও আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। নিজের নিরাপত্তার সঙ্গে আমি কোনো আপস করতে চাই না।
ভারতে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস অনেক দিনের। বিশেষ করে দেশজুড়ে শত শত রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনের সময় এ সহিংসতা আরো উসকে দেয়। ভারতের অন্তত নয়টি রাজ্যে এখনও সশস্ত্র লড়াই চলছে। ফলে বরফাচ্ছাদিত কাশ্মির থেকে শুরু করে উত্তরের জঙ্গলে ভরা রাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এমনিতেই থাকেন ব্যাপক হুমকিতে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ হুমকি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যেসব রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী নেই, সেখানেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মাঝে মধ্যে সহিংস রূপ নেয়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শুরু হবে, প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন রাজ্যে একে একে চলবে ভোটগ্রহণ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রার্থীদের পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
দিল্লি পুলিশের সাবেক প্রধান ম্যাক্সওয়েল পেরেইরা বলছেন, দেশটির বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই নিরাপদে রয়েছেন এবং যারা হুমকি বোধ করছেন, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশেরই। গাড়ির বুলেটপ্রুফ করার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা বুলেটপ্রুফ গাড়ি প্রয়োজন কি না, তা নির্ধারণের দায়িত্বও পুলিশেরই।
তবে জানা গেছে, পুলিশের এমন বক্তব্যকে গোনাতেই ধরছেন না অনেক প্রার্থী। তারা নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এতটাই উদ্বিগ্ন যে, তাদের ব্যক্তিগত গাড়িগুলোর খোলনলচে পাল্টে সেটিকে পারলে সামরিক ট্যাংকের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সূত্র : ডয়চে ভেলে