এগিয়ে আসছে বিদ্রোহী বাহিনী, সর্বাত্মক যুদ্ধ লিবিয়ায়!

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজির কাছে অবস্থিত বেনিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত শুক্রবার বিদায়ের আগে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস (মাঝে)। তিনি দেশটিতে ফের সঙ্ঘাত রোধে সেখানে হাফতারের সাথে বৈঠক করেন : এএফপি –
লিবিয়ার বিদ্রোহী বাহিনী পূর্বাঞ্চল থেকে রাজধানী ত্রিপোলি অভিমুখে রওনা দেয়ায় দেশটিতে নতুন করে সর্বাত্মক সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লিবিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) নেতা সাবেক জে. খলিফা হাফতার তার বাহিনীকে রাজধানী অভিমুখে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে সরকারি বাহিনীর সাথে তাদের লড়াই চলছে। নতুন করে শুরু হওয়া এই সঙ্ঘাতের নিন্দা জানিয়েছে ধনী দেশগুলোর গ্রুপ জি-৭ এবং জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ।

২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ত্রিপোলিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকারের কার্যক্রম চলছে। এই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিদ্রোহী বাহিনী রওনা দেয়ায় রাজধানী ত্রিপোলিতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে জাতিসঙ্ঘ বাহিনী।

বৃহস্পতিবার লিবিয়ার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা জন্য ত্রিপোলিতে ছিলেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সেদিনই নিজের বাহিনীকে রাজধানী অভিমুখে রওনার নির্দেশ দেন এলএনএ নেতা খলিফা হাফতার। শুক্রবার বেনগাজিতে গুতেরেসের সাথে সাক্ষাৎ করে হাফতার তাকে জানিয়ে দেন তার ভাষায় ‘সন্ত্রাসীদের’ পরাজিত না করা পর্যন্ত তার বাহিনীর অভিযান থামাবে না।

১৯৬৯ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতা দখলের সময় সহায়তা করেছিলেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা খলিফা হাফতার। পরে তার সাথে মতবিরোধের হলে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে চলে যান তিনি। ২০১১ সালে গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলন জোরালো হলে দেশে ফিরে আসেন সেকুলারপন্থী হাফতার। আর বনে যান এক বিদ্রোহী নেতা। গত ডিসেম্বরে লিবিয়ার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ আল সেরাজের সাথে এক সম্মেলনে দেখা করেন হাফতার। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেন তিনি। গত সপ্তাহে সৌদি আরব সফর করে বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে আলোচনা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রওনা দিয়েই ত্রিপোলির ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর গারিয়ানের নিয়ন্ত্রণ নেয় হাফতারের এলএনএ-এর সদস্যরা। এ ছাড়া ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ থাকা রাজধানীর একটি বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার খবরও জানা যাচ্ছে। তবে এই খবর নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
ত্রিপোলির পূর্বাঞ্চলীয় শহর মিসতারার বাসিন্দারা বলেছেন, রাজধানী রক্ষায় তাদের শহর থেকে যোদ্ধা পাঠানো হয়েছে। ত্রিপোলির সরকার সমর্থক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো শুক্রবার জানিয়েছেন তারা বহু এলএনএ সদস্যকে বন্দী করেছে। এ বছরের শুরুতে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চল এবং ওই এলাকাগুলোর তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ নেয় এলএনএ-যোদ্ধারা।

এক টুইট বার্তায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি লিবিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ থাকলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন রাজধানীতে নতুন যুদ্ধ এড়ানোর উপায় রয়েছে। পরে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রুপ জি-৭। বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘আমরা লিবিয়ায় যেকোনো ধরনের সামরিক ব্যবস্থার কঠোর বিরোধী।’ দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘ নেতৃত্বাধীন পদক্ষেপের ওপর তাদের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয় ওই বিবৃতিতে।

শুক্রবার রাতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠকের পর জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত জার্মান দূত ক্রিস্টোফ হেউজেন বলেন এলএনএ বাহিনীকে সামরিক গতিবিধি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সদস্য দেশগুলো। তিনি বলেন, এই সঙ্ঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই। এর আগে রাশিয়ার এক মুখপাত্র বলেন, খলিফা হাফতারের অভিযানে সমর্থন নেই ক্রেমলিনের। ক্রেমলিন শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উপায়ে সঙ্ঘাতের সমাধান চায় বলেও জানান তিনি।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধের সব আইন মেনে চলতে প্রত্যেক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘উভয় পক্ষেরই বাহিনীরই বেসামরিকদের হতাহত করার রেকর্ড রয়েছে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমাদের কাছে হাফতারের নেতৃত্বে যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নানা রেকর্ড আছে। তারা নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা, বন্দী ও বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।

সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top