রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহে তুমুল হৈচৈর মধ্যেই ১৯৯৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় ‘বাকের ভাইয়ের’ ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তখন নাটকে নয়, বাস্তবেই ‘বাকের ভাইয়ের’ ফাঁসি রুখতে আন্দোলন হয়েছিল।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর ‘বাকের’ চরিত্রকে এ দিনেই ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। এতে ‘বাকের ভাইয়ের’ ফাঁসি কার্যকরের ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে।
১৯৯২ সালে বিটিভিতে প্রচারিত নাটকটির নাট্যকার ছিলেন জনপ্রিয় উপন্যাসিক হুমাযূন আহমেদ। তার লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাসটি তখনকার সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। সেই উপন্যাস অবলম্বনেই নাটকটি করা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে নাটকের ‘বাকের ভাই’সহ সবকটি চরিত্র মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটে। দুই বছর ধরে চলা নাটকটি টিভি দর্শকদের মনে এতোটাই স্পর্শ করে যে, এক পর্যায়ে ‘বাকের ভাইয়ের’ ফাঁসি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না দর্শকরা।
তখন নাটকের ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে ফাঁসির রুখতে সৃষ্টি পরিস্থিতির খবর নিয়ে সাংবাদিক রাশেদ রউফের ‘সারাদেশে তুমুল হৈচৈ। আজ রাত সাড়ে আটটায় বাকেরের ফাঁসি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে তিনি লিখেছিলেন, ‘সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে একটি ধারাবাহিক টিভি নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’। জনপ্রিয় উপন্যাসিক ও নাট্যকার হুমাযূন আহমেদের এ নাটকটি নিয়ে এখন চতুর্দিকে হৈচৈ পড়ে গেছে। নাটকের অন্যতম চরিত্র ‘বাকের’-এর ফাঁসি হতে দেখবে বাংলাদেশের টিভি দর্শকরা। বাকের-এর ফাঁসি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে দেশে। তার ফাঁসি হোক-এটা কেউ চায় না, সবাই তার মুক্তি চায়। মুক্তির দাবী জানিয়ে মিছিল করেছে চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজের ছাত্ররা ন্যুমার্কেটের মোড়ে, মিছিল করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা র্যাগ দিবসে, মিছিল হয়েছে ঢাকায়, খুলনায়, রাজশাহীতে, ময়মনসিংহে।
দেয়াল লিখন হয়েছে ‘বাকের ভাইয়ের মুক্তি চাই’, নাট্যকারের বাসার সামনে পোস্টার লাগানো হয়েছে, ‘কুত্তাওয়ালীর ফাঁসি চাই, বাকের ভাইয়ের মুক্তি চাই’ একটি নয়, দুটি নয়, গুণে গুণে ৮০০টি চিঠি পৌঁছেছে হুমায়ূন আহমেদের ঘরে এবং ফোনে হুমকি দেয়া হয়, বাকেরের কিছু হলে… কিন্তু নাট্যকার হুমায়ূন আহমেদ এসবের তোয়াক্কা না করে তিনি… ’
ওই নাটকে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মোস্তফা, আসাদুজ্জামান নূর, আবদুল কাদের, মাহফুজ আহমেদ, আফসানা মিমি, হুমায়ুন ফরীদি, মোজাম্মেল হোসেন, সালেহ আহমেদ, আবুল খায়ের, নাজমা আনোয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।