করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও তার জবাব

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত। চীন থেকে উদ্ভূত এই ভাইরাস এখন পর্যন্ত ১৭৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সারাবিশ্বে প্রত্যেক দিন হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে, বিপদে আশার আলো হলো করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের হার মাত্র ৪ শতাংশ।

দ্রুত সংক্রমণের কারণে আজ এটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার প্রায় সকল দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমণের সাথে সাথে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গুজবও। তবে সচেতনতাই হতে পারে এই ভাইরাস থেকে রক্ষার একমাত্র উপায়। তাই গুজব ঠেকাতে ও সচেতনতা বাড়াতে ডাব্লিউএইচও নির্ধারিত আইইডিসিআর দ্বারা প্রকাশিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও তার জবাব নিচে দেয়া হলো:

গৃহপালিত প্রাণী কি নভেল করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে?
• ঘরের পোষা প্রাণী নভেল করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
• তবে পোষা প্রাণীর সংস্পর্শের পর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া ভালো। এই অভ্যাস প্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়ানো ব্যাকটেরিয়া যেমন: ই-কোলাই, সালমোনেলা ইত্যাদি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

শুধু কি বয়স্করাই আক্রান্ত হবে, নাকি তরুণরাও ঝুঁকিতে?
• যেকোনো বয়সের ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
• তবে বয়স্ক ও যাদের আগে থেকে অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগজনিত সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তাদের বেশি ঝুঁকি রয়েছে।
• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব বয়সী মানুষকে ভাইরাস থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে।

অ্যান্টিবায়োটিক কি নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বা প্রতিরোধে কার্যকরী?
• না, অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী।
• নভেল করোনাভাইরাস এক ধরণের ভাইরাস হওয়ায় এ রোগের চিকিৎসা বা প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
• তবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে অ্যান্টিবায়োটিক পেতে পারেন।

নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বা প্রতিরোধে কার্যকারী নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আছে কিনা?
• না, এই ভাইরাসের চিকিৎসা বা প্রতিরোধে কার্যকরী নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি।
• কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ উপশমের জন্য উপযুক্ত ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সহায়ক সেবা দিতে হবে।
• তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে পরীক্ষাধীন সঠিক ব্যবস্থা দেয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ এ সংক্রান্ত গবেষণা ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা করছে।

চীন থেকে আসা কোনো চিঠি বা পার্সেল গ্রহণ করা কি নিরাপদ?
• হ্যাঁ, নিরাপদ।
• ইতোমধ্যে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, মানবদেহের বাইরে এই ভাইরাসটি বেশিক্ষণ বাঁচে না। তাই চীন থেকে আসা কোনো চিঠি বা পার্সেল গ্রহণ ঝুঁকিমুক্ত।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন কোনো ভূমিকা রয়েছে কি?
• না, করোনাভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া প্রতিরোধে এটি কার্যকরী নয়।
• করোনাভাইরাস সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাস হওয়ায় এর জন্য আলাদা ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে।

রসুন বা থানকুনি পাতা খাওয়া কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করবে?
• এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রসুন বা কোনো পাতা কার্যকর নয়।
• তবে উপকারি খাবার হিসেবে এগুলোর জীবাণুনাশক গুণাগুণ থাকতে পারে।

তিলের তেল মাখলে কি শরীরে করোনাভাইরাস প্রবেশ করবে না?
• তিলের তেল করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করে না।
• তবে ক্লোরিন-ভিত্তিক জীবাণুনাশক, ইথার দ্রবণ, ৭৫% ইথানল, প্যারাসেটিক অ্যাসিড, ক্লোরোফর্ম ইত্যাদি কোনো বস্তুর উপরিভাগ থেকে করোনাভাইরাসকে মারতে সক্ষম।

মাউথওয়াশ দিয়ে গার্গল করলে করোনাভাইরাস থেকে কি সুরক্ষিত থাকা যাবে?
• না, মাউথওয়াশ ব্যবহারে এ ভাইরাসের সুরক্ষার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করে কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব?
• স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করলে সাধারণত ঠাণ্ডা থেকে দ্রুত উপশম হয়। কিন্তু এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রমাণ এখনো জানা যায়নি।

‘হ্যান্ড ড্রায়ার’ কি করোনাভাইরাস ধ্বংসে কার্যকরী?
• না, ‘হ্যান্ড ড্রায়ার’ করোনাভাইরাস ধ্বংসে কার্যকরী নয়।
• সুরক্ষার জন্য দুই হাত বারবার সাবান-পানি দিয়ে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন ও পরিষ্কার কাপড়/ টিস্যু দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলুন।

আল্ট্রা-ভায়োলেট জীবাণুনাশক ল্যাম্প কি করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে পারে?
• হাত বা শরীরের কোনো অংশ জীবাণুমুক্ত করতে আল্ট্রা-ভায়োলেট জীবাণুনাশক ল্যাম্প ব্যবহার করা উচিত নয়। এর ব্যবহার ত্বকে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তকরণে থার্মাল স্ক্যানার কতটুকু কার্যকর?
• থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। এই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে জ্বর এলেই কেবল থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শনাক্ত সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের উপসর্গ না থাকলে ওই ব্যক্তিকে এই স্ক্যানার দিয়ে শনাক্ত করা যাবে না।

সারা গায়ে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কি করোনাভাইরাস মেরে ফেরা সম্ভব?
• না, সম্ভব নয়। আর এ সকল জীবাণুনাশক চোখ-মুখ ইত্যাদিসহ কাপড়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সব জীবাণুনাশক ব্যবহারে সতর্ক হোন।

আরো কিছু তথ্য :
• ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও তুষারপাত করোনাভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে না। আর বাইরের তাপমাত্রা যত ঠাণ্ডাই হোক না কেন, মানবদেহের তাপমাত্রা ৩৬.৫ ও ৩৭ সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে।
• গরম পানি দিয়ে গোসল করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে না।
• এই ভাইরাস প্রতিরোধে ঘন ঘন হাত ধোয়া ও নাক-মুখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
• আক্রান্ত দেশের প্রস্তুতকৃত দ্রব্যসামগ্রী থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায় না।
• মশার কামড়ে এ ভাইরাস ছড়ায় না। এ রোগ হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু, সর্দি ইত্যাদি মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়।

Share this post

scroll to top