পরপর ৪ ছেলে: মেয়ে সন্তান জন্ম না হওয়ায় ছেলে সন্তানকে হত্যা করে পুকুরে নিক্ষেপ

childঅবশেষে বদরগঞ্জে পুকুরে পাওয়া নিহত শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তিনটি পুত্রের পর চতুর্থটিও পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ফরিদা বেগম। স্বামী হামিদুরের আশা ছিল এবার কন্যাসন্তান হবে। কিন্তু স্ত্রী ফরিদা বেগম হাসপাতালে চতুর্থ সন্তানটিও ছেলে জন্ম দেওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন বাবা হামিদুর রহমান।

তাই ৪৮ দিনের মাথায় ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটিকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে হত্যার পর বাড়ির পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেন তিনি। পরে এলাকায় প্রচার চালান জিন বা ভূতে তুলে নিয়ে তার সন্তানকে হত্যা করেছে।

মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের আরাজী দিলালপুর বানিয়াপাড়ায়। পুলিশ ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে বাবা ও মাকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটির হত্যার আসল রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।

মঙ্গলবার রংপুরের বদরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন শিশুটির বাবা হামিদুর রহমান। এ সময় তিনি নিজের সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় শিশুটির দাদা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় ছেলে হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে নাতিকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।

স্বজন ও মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির মা ফরিদা বেগম রোববার সন্ধ্যায় ঘুমন্ত শিশু সুইম বাবুকে ঘরে রেখে কাজের জন্য কিছু সময়ের জন্য বাইরে যান। ফিরে এসে দেখেন ঘর অন্ধকার। কিন্তু শিশুটি নেই। পরে হামিদুর রহমানকে খবর দেওয়া হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয় স্থানীয় পুলিশকে। সারারাত কোথাও শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পর দিন সোমবার ভোরের দিকে বাড়ির পাশে একটি ডোবার কিনারে শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

ওই সময় শিশুটির মা ফরিদা বেগম ও বাবা হামিদুর রহমানকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। একপর্যায়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হামিদুর নিজের সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। সেখানে হত্যার দায় স্বীকার করলে আদালত তাকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান।

স্বজনরা জানান, হামিদুর রহমান পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলায় একটি স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী। তার আশা ছিল এবারের সন্তানটি হবে মেয়ে। কিন্তু ছেলের জন্ম হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন তিনি। জন্মের পর থেকে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। ঘটনার দিন তিনি কর্মস্থল থেকে আগাম ছুটি নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন।

পরে তিনি লালদীঘি হাটে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু তিনি হাটে না গিয়ে গোপনে বাড়ির এক কোনে অন্ধকারে লুকিয়ে ছিলেন। স্ত্রী ফরিদা বেগম শিশুটিকে ঘরে রেখে বাইরে যান। ওই সময় ঘুমন্ত শিশুটিকে ঘর থেকে এনে হত্যার পর ডোবায় ফেলে আবারও হাটে চলে আসেন তিনি।
সন্তান হারিয়ে ফরিদা বেগম বলেন, আগের তিন ছেলে জন্ম হলে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার স্বামী চতুর্থ ছেলেকে গোপনে হত্যা করেছে। হাসপাতালে এক মায়ের মেয়েসন্তানের সাথে তার ছেলেসন্তান বদল করার জন্য আলোচনা করলেও তিনি তাতে রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্বামী ছেলেসন্তান হত্যা করবে তা তিনি ভাবতে পারেননি।

এদিকে বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়েসন্তানের আশায় পরপর চারটি ছেলের জন্ম হওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল শিশুটির বাবা হামিদুর। সিজারের সময় রংপুর মেডিকেলে অপর এক প্রসূতি মায়ের সঙ্গে হামিদুর সন্তান বদলের মৌখিক চুক্তি করেন। ওই মহিলার আগের তিন যমজ কন্যার পর চতুর্থটিও মেয়ে জন্ম হয়। পরে তিনি তার কন্যাসন্তানটি বদল করতে চায়নি। এতে মনে মনে ক্ষুব্ধ ছিল ঘাতক হামিদুর। আদালতে সে সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

Share this post

scroll to top