ডিম নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও তার বাস্তবতা

ডিম একটি পরিপূর্ণ খাবার। সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। ডিম আমাদের শরীরের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ইত্যাদির চাহিদা মেটায়। তবে এই ডিম নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। ভুল ধারণাহেতু শরীরের জন্য স্বল্পমূল্যে অধিক পুষ্টিদাতা একটি খাবার খেতে ভয়ও পাচ্ছেন অনেকে। তাই আমাদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে, সেই ভুল ধারণাগুলোর সত্যতা তুলে ধরছি।

ভুল ধারণা: ডিম খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

সত্যতা: ডিম সম্পর্কে ভুল ধারণার মধ্যে অন্যতম একটি কথা হচ্ছে ডিম খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অবেসিটি’-তে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায় ডিমে খুবই কম পরিমাণ ক্যালরি ও চর্বি থাকে। এ ছাড়াও ডিম খেলে বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়। ফলে ডিম খেলে ওজন বাড়ে না, বরং কমে। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তারা প্রতিদিন সকালের নাশতায় ডিম খান নিশ্চিন্তে।

ভুল ধারণা: ডিম খেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।

সত্যতা: যারা হৃদরোগে আক্রান্ত তাদের মাঝে ডিম নিয়ে অধিকতর ভীতি কাজ করে। অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে স্পষ্ট জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ডিম খেতে কোনোই সমস্যা নেই। এতে কোলস্টেরলের মাত্রা বাড়ার ভয় নেই। পুষ্টিবিদদের মতে, তারাও প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারেন।

ভুল ধারণা: গরমে ডিম খেতে মানা।

সত্যতা: গরমে ডিম খেতে নিষেধ করা মারাত্মক ভুল। কারণ ডিমে থাকা আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন ও নানা ধরনের খনিজ উপাদান গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই চিকিৎসকদের মতে, গরমেও প্রতিদিন এক থেকে দুটি ডিম খাওয়া উচিত। অপরদিকে যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তারা প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি পর্যন্ত ডিম খেতে পারেন।

ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ছবি: সংগৃহীত

ভুল ধারণা: সবচেয়ে বেশি প্রোটিন থাকে হলুদ অংশ বা কুসুমে।

সত্যতা: অনেকে আছেন প্রোটিনের জন্য ডিম খেয়ে থাকেন। এ জন্য তারা ডিমের হলুদ কুসুম খাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটিও একটি ভুল ধারণামাত্র। কারণ ডিমের অধিক প্রোটিন থাকে তার সাদা অংশে।

ভুল ধারণা: ডিম খেলে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।

সত্যতা: ডিমে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। আগে অনেকেই মনে করতেন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে ডিমের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, ডিম খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যেতে পারে। জানা যায়, যেসব মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় নিয়মিত ডিম খায় বয়সকালে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

ভুল ধারণা: বাদামি ডিমের পুষ্টিগুণ সাদা ডিমের চেয়ে বেশি।

সত্যতা: এটিও একটি ভুল ধারণা। আসলে বর্ণের সঙ্গে ডিমের পুষ্টিগুণের কোনো পার্থক্য হয় না। তাই পুষ্টির জন্য উভয় ডিমই খেতে পারেন। লক্ষ করলে দেখবেন বাদামি ডিমের দাম সাদা ডিমের চেয়ে বেশি। এর ভিত্তি হচ্ছে শুধু আমাদের ভুল ধারণা।

ভুল ধারণা: ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ডিম খাওয়া উচিত নয়।

সত্যতা: ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় ডিম খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। সুতরাং টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সপ্তাহে চারটি ডিম খাওয়া উচিত।

সত্যতা: ডিম সম্পর্কে এই একটি কথা এমনভাবে প্রচারিত হয়েছিল যে, এখনো অনেকেই বিশ্বাস করেন বাজারে নকল ডিম পাওয়া যাচ্ছে। চীন থেকে নকল ডিম আমদানির সংবাদ কোনো প্রকার চিন্তা-ভাবনা না করেই দেশের প্রথম সারির পত্রিকা ও টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছিল। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নকল ডিমের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে মর্মে কিছু সংবাদও প্রচারিত হতে থাকে। ভ্রান্ত একটি কথা এত বেশি প্রচার হতে থাকল যে অনেকেই ডিম খাওয়া কমিয়েও দিয়েছিলেন। বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশেও বিভিন্ন ল্যাব টেস্টে নকল ডিমের প্রমাণ মেলেনি। অর্থাৎ বলা যায়, বাজারে নকল ডিমের কোনোই অস্তিত্ব নেই। শুধু নিছক গুজবে বিশ্বাস করে মহান স্রষ্টার একটি সুন্দর নেয়ামত থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছিলাম।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top