নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কয়েকজন কিশোরের সাহসিকতায় প্রাণে রক্ষা পেল বিরল প্রজাতির গন্ধগোকুলের পাঁচটি ছানা। সোমবার রাতে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় প্রাণীগুলো উদ্ধার করেন পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিরল প্রজাতির গন্ধগোকুলের ছানা গুলোকে কে বা কারা প্লাস্টিক খাঁচার ভিতর ভরে জারিয়া রেল স্টেশনের ট্রেনের সিটের নিচে রেখে যান। এ সময় কয়েকজন কিশোর ময়মনসিংহ থেকে দুর্গাপুর আসার পথে রেলের সিটের নিচে প্রাণীর শব্দ পেয়ে খাঁচা সামনে আনতেই ছানাগুলো দেখতে পান। পরে জারিয়া রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার ও রেল পুলিশকে জানালে তারা প্রাণীগুলো নিতে কিছুটা অপারগতা স্বীকার করেন। এই সময় অর্ণব ভৌমিক নামে এক কিশোর সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রাণীগুলোকে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে হস্তান্তর করেন।
এদিকে উদ্ধার হওয়া ছানাগুলো বেশ কয়েক ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকায় স্বেচ্ছাসেবকরা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাতেই উপজেলা সদর ইউনিয়নের গহীন বনে প্রাণীগুলো অবমুক্ত করেন।
অর্ণব ভৌমিক জানান, আমরা সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর আগে বেশ কিছু প্রাণী উদ্ধারের ভিডিও চিত্রও সংবাদ দেখেছি। এখানে আমরা একটি গন্ধগোকুল উদ্ধারের সংবাদও আগে দেখেছিলাম যার কারণে এই প্রাণীগুলোর সাথে কিছুটা পরিচিত। গতকাল সন্ধ্যায় পর আমরা ময়মনসিংহ থেকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসার পথে জায়গায় রেলস্টেশনে নামা ঠিক আগ মুহূর্তে সিটের নিচে প্রাণীগুলো দেখতে পাই। স্টেশন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে তারা প্রাণীগুলো নিতে চান না। আমরা প্রাণীগুলো ওই জায়গায় রেখে রাখলে হয়তো বা কেউ এদের মেরে ফেলত তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবকদের জানাই এবং তাদের কাছে প্রাণীগুলো হস্তান্তর করি।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং এর সাধারণ সম্পাদক মাসুদ বিল্লাহ অভি জানান, আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন কিশোর আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জানান গন্ধগোকুলের কয়েকটি ছানা একে বা কারা প্লাস্টিক খাঁচায় রেখে গেছে। আমরা তাৎক্ষণিক তাদের সাথে কথা বলে এবং সার্বিক দিক নির্দেশনা দেই প্রাণীগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে। ওই কিশোররা সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে প্রাণীগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। আমরা যতদূর সম্ভব প্রাণী গুলোকে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং তাদের খাবার দিয়েছি। এরা যেহেতু নিশাচর প্রাণী এরা রাতেই বেশি চলাফেরা করে। তাই প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে রাতেই আমরা প্রাণীগুলোকে সদর ইউনিয়নের গহীন বনে অবমুক্ত করেছি। বিগত কিছুদিন আগে আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে উজন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী উদ্ধারে আমরা ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি এবং উদ্ধার করছি। এরই অংশ হিসাবে গেল কিছুদিন আগে একটি অজগরের বাচ্চা উদ্ধার করেছি এবং আজ একসাথে পাঁচটি গন্ধগোকুলের ছানা উদ্ধার করতে পেরেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং যেভাবে বন্যপ্রাণীদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবিদার। আমরা প্রাণীদের রক্ষায় ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি। আপনার যদি বিগত দু বছর আগে দেখেন তাহলে এই সুসং জনপদে অনেক প্রাণী মানুষ মেরে ফেলতো। তবে এখন এই চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে মানুষ এখন আর প্রাণীদের হত্যা করছে না। প্রাণীদের দেখা পেলে কিংবা তাদেরকে আটকে রেখে আমাদের ও স্বেচ্ছাসেবকদের খবর দিচ্ছে। এতে করে বন থেকে লোকালয়ে চলে আসার প্রাণীরা যেমন রক্ষা পাচ্ছে তেমনি পরিবেশও বড় ধরনের একটি বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাচ্ছে। পরিবেশ সঠিক রাখতে হলে বন্যপ্রাণী থাকা অবশ্যক। তাই সবাই যে যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসলে প্রাণীদের রক্ষা আরো সহজ হবে।