ওসামানীয় খিলাফার সবচেয়ে দাপুটে বাদশাহ ছিলেন সুলতান সুলেমান। তার কাছে স্ত্রী হুররম সুলতানের লেখা একটি চিঠি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল আর্কাইভ। সুলতান সুলেমান একটি যুদ্ধের মিশনে থাকার সময় তার কাছে দীর্ঘ চিঠিটি লিখেছিলেন হুররম।
কর্তৃপক্ষ বলছে, এই চিঠিটিতে প্রমাণ হয় ওসমানীয় খিলাফাহ যুগে তুর্কি সাহিত্য বিশ্বমানের ছিলো। ১৫২৬ সালে লেখা হয়েছিল চিঠিটি।
সুলতান সুলেমান ছিলেন ওসমানীয় খিলাফাহর সবচেয়ে সফল শাসক। ১৫২০ থেকে ১৫৫৬ সাল পর্যন্ত ছিলো তার শাসনকাল। তার শাসনামলে যেমন অনেকগুলো সফল সামরিক অভিযান হয়েছিল তেমনি আইন, সাহিত্য, শিল্পকলা, স্থাপত্যসহ অনেক বিষয়ে তুরস্ক বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করেছিল।
দাসী থেকে রাণী হওয়া সুলতান হুররমের এই চিঠিটিতে স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা, আবেগ-অনুভূতি ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন, ‘স্রষ্টার সৃষ্ট মহাবিশ্বে আমি যেন হারিয়ে গেছি। আপনার দেয়া সুরক্ষায় আমি যেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো কাটিয়েছি, যেমনটা গহনার বাক্সে সুরক্ষিত থাকে মুক্তা। আপনার অবর্তমানে আপনার এই অনুগত অসহায় সময় কাটাচ্ছে। শুধুমাত্র আপনার সামনেই আমি শান্তি খুঁজে পাই। সেই সময়ে আমার আনন্দ ও সুখ প্রকাশ করার জন্য কোন ভাষা কিংবা দোয়াতের কালি যথেষ্ট নয়।
হুররম সুলতান এরপর লিখেছেন, ‘আপনার সাথে যেসময়গুলো কাটিয়েছি, যতটা সময় আপনার সাথে থাকি সেটুকু সময় আপনার এই দাসীর হৃদয় যেন পরিপূর্ণ থাকে। আর আপনি যখন দূরে থাকেন, তখন আপনার স্মৃতিচারণ করেই আমি সময় কাটাই। আপনি দূরে থাকলে অসহায় বোধ করি, কোন কিছুই আমার বেদনা দূর করতে পারে না।’
জানা যায়, দূত মারফত পাঠানো এই চিঠির সাথে হুররম তার চোখের পানিতে ভেজা একটি পোষাকও পাঠিয়েছিলেন সুলতানের কাছে। হুররম লিখেছেন, ‘আমার জীবন, আমার প্রিয় সুলতান, আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা যেন আবার আপনার হাস্যোজ্বল মুখ দেখতে পাই। কোন কিছুই যেন আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। সব সময় চাই আমার প্রিয় সুলতান যেন দুনিয়াতে ও আখিরাতেও সুখী থাকেন।
হুররম সুলতান চিঠির শেষ দিকে লিখেছেন, দোয়া করি আপনি সব সময় শত্রুর বিরুদ্ধে জয়ী হোন। আমি জানি আমার জন্য আমার সুলতান ভাগ্যের কিছু নির্মমতাও সয়েছেন।’
চিঠির একেবারে শেষ লাইনে লেখা ছিল, ‘উভয় জীবনে আপনার সুখ ছাড়া আর কিছু চাই না। আপনার গরিব ও বিনীত দাসী হুররম’
১৫ বছর বয়সে রাজপ্রাসাদে দাসী হয়ে আসেন হুররম। অল্প দিনেই তিনি সুলতানের প্রিয় হয়ে ওঠেন। রাজ প্রটোকল ভেঙে তাকে বিয়ে করেন সুলতান সুলেমান। তার গর্ভে ছয় পুত্র সন্তানের পিতা হয়েছিলেন সুলতান সুলেমান। ওসমানীয় খিলাফাহ যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় হুররমকে। তার সন্তান সুলাইমান পিতার মৃত্যুর পর পরবর্তী সুলতান হয়েছিলেন।