রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি বছর ২৫ হাজার শিশুর জন্ম

শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে জন্মনিরোধক ব্যবহারের আগ্রহ একেবারেই কম। এখানকার মাত্র ৮ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন। তবে ৭৫ শতাংশ রোহিঙ্গা দম্পতি জন্মনিরোধক ব্যাপারে ধারণা রাখেন।

জন্মনিরোধক ব্যবহার না করায় ব্যাপক হারে বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। এতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতি দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-সাউথইস্ট এশিয়া জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে গবেষণাটি করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক এম মফিজুল ইসলাম, কক্সবাজারের ফ্রিল্যান্স গবেষক মোঃ মশিউর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক ড: মোঃ নুরুজ্জামান খান।

গবেষণায় আরো জানা যায়, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ নারী ও পুরুষ জন্মনিরোধক হিসেবে কনডমের নাম শুনলেও মাত্র ২০ দশমিক ৮ শতাংশ দম্পতি এটি একবার ব্যবহার করেছেন। তবে মাত্র ৮ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ নিয়মিত এটি ব্যবহার করেন।

এ বিশাল জনগোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে জন্মনিরোধক ব্যবহারের অনীহার কারণ হিসেবে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। যেমন-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা, জন্মনিরোধক ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভুল ধারণা, নারীদের অধিকাংশেরই জন্মনিরোধক সম্পর্কে ধারণা না থাকা, রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মনিরোধক সরবরাহের মাত্রা কম থাকা ও দাম্পত্য জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধার কথা তুলে ধরতে গিয়ে গবেষকরা রোহিঙ্গা শিবিরের বেশ কয়েকজনের উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। যেমন, রোহিঙ্গা পুরুষরা মনে করেন যে সন্তান জন্ম দেন নারীরা, পুরুষরা নয়। তাই কোনো ধরনের জন্মনিরোধক ব্যবহার করতে হলে নারীরা করবেন। এছাড়া ধর্মীয় বাধাকেও অনেকে বড় করে তোলেন।

গবেষণায় আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে। রোহিঙ্গারা মনে করেন তারা যত বেশি সন্তান নেবেন তত বেশি সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কোনো ধরনের জন্মনিরোধক ব্যবহারে আগ্রহী হন না তারা। তবে অনেক নারীই জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন কিন্তু তা স্বামীর অগোচরে। কারণ তারা মনে করেন, তাদের স্বামী যদি জানতে পারেন তাহলে সংসারে অশান্তি নেমে আসবে।

গবেষক দলকে একজন নারী বলেন, ‘আমার স্বামী চায় না আমি পরিবার পরিকল্পনার সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করি। তিনি নিজেও করেন না। তিনি জন্মনিরোধক ব্যবহারেও ইচ্ছুক নন। তাই আমি জন্মনিরোধক পিল নেই। যদিও এর কারণে আমার খারাপ লাগে ও মাথাব্যথা হয়। তাই আমি ডিপো গ্রহণ করার চিন্তাভাবনা করছি। কিন্তু আমি যদি আমার শারীরিক অসুস্থতার কথা স্বামীকে বলি তাহলে হয়তো তিনি আরেকটা বিয়ে করে নেবেন।’

এ প্রসঙ্গে গবেষক ড: নুরুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিবছর ২৫ হাজার শিশু জন্ম নেয়। যার অর্ধেকের বেশি শিশুর জন্মই হয় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ফলে। এত উচ্চ সংখ্যক অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের কারণে একদিকে যেমন মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে ক্যাম্পগুলো বেশি জনবসতিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

Share this post

scroll to top