আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ শনিবার থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট স্টেশনের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি করা হচ্ছে। অনলাইনে অর্ধেক এবং ঢাকার পাঁচটি কেন্দ্রে মিলছে বাকি অর্ধেক টিকিট। তবে সকাল ৮টা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কাটা যাচ্ছিল না। এক ঘণ্টা পর ওয়েবসাইট স্বাভাবিক হলেও অনেক যাত্রী টিকিট পাননি। তাদের অভিযোগ, সকালে ই-টিকেটিং ওয়েবসাইটের সার্ভার বন্ধ ছিল। ওয়েবসাইটে একটি বার্তা লিখে ধৈর্য ধরতে বলেছিল কর্তৃপক্ষ। এরপর সোয়া ৯টার দিকে ওয়েবসাইট স্বাভাবিক হলে দেখা যায় টিকিট নেই।
টিকিট প্রত্যাশী অনেকেই ফেসবুকে রেলওয়ের ফ্যান পেজে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন।
সার্ভারে প্রবেশ করতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়ে সোয়া ৯টার দিকে জিএম আজাদ হোসেন লিখেছেন, “সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার চেষ্টা করতেছি! ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায় না! শুধু লেখা আসে ‘ইউ আর ভেরি ভেল্যুয়েবল টু আস’। এক ঘণ্টার চেষ্টায় যখন ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারলাম তখন দেখি টিকেট শেষ! ২৭ তারিখের ঢাকা-খুলনার কোনো টিকেট আর নাই।”
আজাদের প্রশ্ন, যেখানে ওয়েবসাইটে ঢোকা যায় না, সেখানে টিকেট শেষ হয়ে যায় কীভাবে? অনলাইনে একসেস দিল না তাহলে টিকেট গেল কোথায়? এরা দেশের মাটি বিক্রি করে দিক আমরা অন্য কোনো দেশে চলে যাই!
তবে টিকিট কাটতে পেরে কেউ কেউ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মেহেদী হাসান নামে একজন লিখেছেন, দীর্ঘ এক ঘণ্টা যুদ্ধ করার পর টিকিট কাটতে পেরেছি। মোবাইল দিয়ে যখন লগইন করতে পারছিলাম না তখন ওয়াইফাই দিয়ে ডেক্সটপ দিয়ে ঢুকে দেখি অনেক টিকিট। সাথে সাথে তিনটি কেটে নিলাম। পৌনে ৯টার দিকে সার্ভার ফ্রি হলে ৮টা ৫৭ মিনিটে টিকিট কাটতে পেরেছি। যারা কাটতে পারেন নাই আগামীকাল পৌনে ৯টা থেকে চেষ্টা করতে পারেন। টিকেট কাটতে পেরে নিজেকে নায়ক নায়ক মনে হচ্ছে।
এদিকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই যাত্রীর ঢল নেমেছে কমলাপুরে। যাত্রীরা কেউ ভোররাত বা কেউ তার আগে থেকেই স্টেশনে এসে বসে ছিলেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের লাইন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট পাচ্ছেন, তারা খুশি। অনেকে আবার দীর্ঘসময় লাইন ধরেও টিকিটের ব্যাপারে অনিশ্চিত।
কবির মিয়া নামের এক টিকিট প্রত্যাশী জানান, শুক্রবার রাত ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেয়েছেন।
যাত্রীদের অভিযোগ, একেকটি টিকিট কিনতে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগছে। এনআইডি বা জন্মসনদ দেখিয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে।
কেন এত দেরি জানতে চাইলে কাউন্টারের বিক্রয়কর্মী জানান, সার্ভারে বেশি চাপ পড়ার কারণে একটু সময় লাগছে। তারপরও পর্যাপ্ত টিকিট রয়েছে। সবাই শৃঙ্খলা মেনে থাকলে টিকিট পাবেন।
এ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, কাউন্টারগুলোতে টিকিট প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি। শনিবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু, তাই ভিড় বেশি। তবে অগ্রিম টিকিট বিক্রির সব প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। আশা করছি সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ও সুশৃঙ্খলভাবে টিকিট বিক্রি করতে পারব। অনলাইনের পাশাপাশি কাউন্টারে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সকল আন্তনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া স্টেশন (পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদে ছয়টি বিশেষ ট্রেন চলবে। তবে বিশেষ ট্রেনের টিকিট অনলাইনে দেয়া হবে না।