পদ্ধতিগত পরিবর্তনে মৎস্যখাতে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি কমবে

মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। উৎপাদন পরবর্তী মৎস্য আহরণ, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সরবরাহ ব্যবসায় নিয়োজিতদের সচেতনতা ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব, উন্নত পরিচর্যা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ সঠিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতায় উৎপাদনের প্রায় ২৮-৩০ শতাংশ মাছ নষ্ট হয়ে যায়। শুধু কাঁচাবাজারেই বিভিন্ন কারণে পঁচে যায় ১৫-১৮ শতাংশ মাছ। এতে দেশের মৎস্য সম্পদে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ ধরার পর পরিচর্যা ও যথাযথ সরঞ্জামসহ বরফ বাক্স ব্যবহার করে আহরনকৃত মাছের পঁচনের পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি বাজারে প্রাপ্ত সস্তা মাছগুলার মূল্য সংযাজন করে এই ক্ষতি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

মৎস্যখাতে এই ক্ষতি পূরণের পরিপ্রেক্ষিতে এবং খামারিদের মাঝে মাছ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে ৪ বছর মেয়াদি ‘স্বাদুপানির মাছ আহরণোত্তর ক্ষতি প্রশমন ও মূল্য সংযাজন’ শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালিত হয়েছে। বুধবার (১৬ মার্চ) সকাল দশটায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সেমিনার কক্ষে আয়াজিত প্রকল্পটির সমাপনী কর্মশালায় এসব কথা বলেন প্রকল্পটির প্রধান সমন্বয়ক ও প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. নওশাদ আলম।

প্রকল্পটির আওতায় কিশারগঞ্জের হাওর ও দাউদকান্দির প্লাবনভূমি এলাকার মিঠাপানিতে গবেষণা চালানো হয়। এই প্রকল্পের আওতায় হস্ত ও পদচালিত ২টি মাছের বরফ ভাঙ্গার যন্ত্র উদ্ভাবন করা হয় যা দিয়ে ঘন্টায় ৯০০ কেজির মতো বরফ ভাঙ্গা সম্ভব। এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরার আদর্শ নকশা উদ্ভাবন করা হয়। এছাড়াও এই প্রকল্পের আওতায় কম দামী মাছের মূল্য সংযাজন করে বিভিন্ন রকম মৎস্যজাত পণ্যের উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ করা হয়।

প্রকল্পটির মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. এ. কে এম. নওশাদ বলেন, প্রাণিজ প্রোটিনের প্রায় ১৭ শতাংশ আসে মাছ থেকে। বিপুল পরিমাণ এ চাহিদার প্রেক্ষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। তবে পর্যাপ্ত সারঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের অভাবে মাছ আহরণ থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি মাছ নষ্ট হয়ে যায়। শুধু পরিবহণের সময় নষ্ট হয়ে যায় মাছের ক্ষতি অর্ধেক কমিয়ে আনলে প্রায় ৮হাজার কােটি টাকার মাছ বাঁচানো সম্ভব। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও উদ্যাক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া মাছ আহরণ থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত পদ্ধতিগত অনক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। এতে অনকাংশেই ক্ষতির পরিমাণ কমে যাওয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল মনসুরের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেজিএফের পরিচালক ড. নাথুরাম সরকার। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আফতাব হোসেন, কেজিএফের প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট মো. নুরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কর্মশালায় প্রকল্পটির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. নওশাদ আলমের রচনায় মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রশমণ ‘প্রশিক্ষণ সহায়িকা’ নামক ২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

Share this post

scroll to top