কলকাতার ধর্না মঞ্চেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এর পরের আন্দোলন হবে দিল্লিতে। সেই মোতাবেক বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দিল্লির যন্তরমন্তরে শুরু হতে যাচ্ছে ‘গণতন্ত্র রক্ষা’র সেই কর্মসূচি। এ কর্মসূচি আগ্রহ জাগিয়েছে পুরো ভারত জুড়ে বিশেষ করে বিরোধী শিবিরে।
সরকারবিরোধী এ কর্মসূচিতে কারা কারা যোগ দিচ্ছেন তা নিয়েই মূলত কৌতুহল। এ পর্যন্ত তিন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও চন্দ্রবাবু থাকছেন। অখিলেশ, মায়াবতী, তেজস্বীর সমর্থনও পাওয়া গেছে। তবে তারা প্রতিনিধি পাঠাবেন, নাকি নিজে আসবেন, সেটা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
এদিকে সবচেয়ে বড় কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে রাহুল গান্ধিকে ঘিরে। পার্লামেন্টে তৃণমূলের সভায় যোগ দেয়া কংগ্রেস সভাপতি যন্তরমন্তরের সভায় যোগ দেবেন কি না, আপাতত সেটাই দেখার বিষয়।
পার্লামেন্ট ভবনে বুধবার আগে থেকেই তৃণমূল পার্লামেন্ট সদস্যদের ধর্নার কর্মসূচি র্নিধারণ করা ছিল। সেখানে এ দিন হাজির হন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধিও। দলের এমপিদের সাথে প্রতিবাদ মিছিলেও পা মেলান তিনি।
কিন্তু যন্তরমন্তরে রাহুলের আসার সম্ভাবনা কতটুকু? ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের ব্রিগেড সভা তথা ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালি’তে নিজে যোগ দেননি। কিন্তু দলের দুই নেতা মল্লিকার্জুন খড়গে এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে পাঠিয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে সময় বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই সেই সময় ব্রিগেডের সভায় রাহুল যোগ দেননি। ওই ব্যাখ্যা মনে রেখেই দিল্লিতে তার অবস্থান কী হবে তাই নিয়ে উৎসুক সবাই।
যন্তরমন্তরে সভার উদ্যোক্তা আম আদমি পার্টি (আপ)। রাজধানীর রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে আপের সম্পর্কের কথাও সবারই জানা। ফলে লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে এবং রাতারাতি সেই তিক্ততা ভুলে রাহুল গান্ধি যন্তরমন্তরের বিরোধী মঞ্চে চলে আসবেন, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ। ফলে এখানেই ব্রিগেডের মতো প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে থাকার সম্ভাবনা উঠে আসছে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের উভয় কূলই রক্ষা পেতে পারে।
তবে দিল্লির এ ধর্নায় রাহুলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না। একেতো বুধবারেই এক ধর্নাতে যোগ দিয়েছেন, অন্যদিকে দু’দিন আগেই দিল্লিতে চন্দ্রবাবুর অনশন মঞ্চে সশরীরে পৌঁছে গিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরাট বিরাট অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল। এই দুই কারণেই সশরীরে রাহুলের উপস্থিতির একটা সম্ভবনা থাকছে। যদিও চন্দ্রবাবু ও কেজরিওয়ালের সাথে রাহুলের সম্পর্ক এক রকম নয়।
ধর্নায় তিন মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও যাদের উপস্থিতি নিশ্চিত, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। এছাড়াও থাকছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লা, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার। তবে মায়া-অখিলেশ-তেজস্বীরা নিজে আসবেন, নাকি প্রতিনিধি পাঠাবেন, তা এখনও খোলাসা হয়নি।
তবে কলকাতার ব্রিগেডের সভায় যেমন শুরু থেকে রাশ নিজের হাতে রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লিতেও সেই সম্ভাবনাই প্রবল। এ দিন সকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। সকাল দশটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর সেই ধর্না শেষ হয়।
সূত্র : দ্য উইক, টাইমস অব ইন্ডিয়া