বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ঐতিহ্যবাহী সড়ক হচ্ছে দেবদারু গাছের সারি দিয়ে সাজানো কংক্রিটের সড়ক। কিন্তু ভারী যানবাহন চলার কারণে এই দেবদারু মন্ডিত কংক্রিটের সড়কটি ধ্বংসের কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিক্ষক , শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় থেকে কোষাধ্যক্ষের কার্যালয় পর্যন্ত কংক্রিটের তৈরি এই সড়কটিতে রয়েছে দেড় শতাধিক দেবদারু গাছ। গাছগুলোর দু পাশ দিয়ে রয়েছে কংক্রিট দিয়ে তৈরি রাস্তা। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরান স্থাপনার মধ্যে একটি। রাস্তাটি অনেক আগে নির্মিত হলেও দশকের পর দশক এটি অক্ষত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সড়কে দিয়ে ট্রাক, ট্রলি, ট্রাক্টর চালিত বিশালাকার পণ্যবাহী যানসহ ভারী যান চলাচলের কারণেই রাস্তাটি তার সৌন্দর্যতা হারাচ্ছে। ভারী যানবাহন চলাচলে সড়কটির ২৫ টিরও অধিক স্থানে ভাঙনসহ রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্ত এবং কোথাও কোথাও অর্ধফুটেরও বেশি দেবে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাক চালক জানায়, ‘আমাদের আসলে কিছু করার নেই। এই সড়কটি ব্যবহার না করতে পারলে শেষ মোড়, সুতিয়াখালি, বয়ড়া, ভালুকা, গফরগাঁয়ে চলাচল করা বন্ধ হয়ে যাবে আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে জব্বারের মোড়-শেষ মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি আছে সেটি চালু হলে ক্যাম্পাসের ভিতরের দেবদারু সড়কে আমরা আর গাড়ি চালাবো না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সাবেক ভিপি তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকাতা-কর্মচারী সকলের আবেগের একটি সড়ক হচ্ছে দেবদারু মন্ডিত কংক্রিটের সড়ক। এটি মূলত পায়ে হেঁটে চলার একটি সড়ক, অতীতেও আমরা তাই দেখেছি। কিন্তু ভারী যানবাহন চলায় রাস্তাটি ভেঙ্গে ও দেবে যাওয়ার কারণে সড়কটিতে আর প্রাণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এই সড়কটি দিয়ে সব ধরণের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সড়কটিকে আগের মত করে ফিরিয়ে দেওয়া।
বাকৃবি অফিসার পরিষদের সভাপতি খায়রুল আলম নান্নু বলেন, দেবদারু সড়কটি আমাদের প্রাণের সড়ক। শত শত মিছিলের সাক্ষী এই দেবদারু সড়ক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময়ে এই রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। এই সড়কটি দিয়ে যেখানে কেবল পথচারী ও হালকা যানবাহন চলার কথা সেখানে এই সড়কটি দিয়ে ১০-১২ টনের অধিক ভারী ট্রাক-লড়ি, বাস চলছে। এই ঐতিহ্যবাহী সড়কটি এ ভার ক্ষমতা না নিতে পেরে বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। যেহেতু এটি কংক্রিটের সড়ক তাই এটির সংস্কার করাও কঠিন। আর করলেও আগের মত হবে কিনা জানিনা।
বাকৃবির কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ট্রাক চলার সময় শব্দদূষণের জন্য আমরা শিক্ষকের কথা ঠিকমতো শুনতে পারি না। ক্লাসের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং বিশেষ করে কৃষি অনুষদ সংলগ্ন রাস্তায় যানবাহনের চলাচল সীমিতকরণ, উচ্চশব্দের যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং গতিসীমা নির্দিষ্ট করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, ‘ফসিলের মোড় থেকে শেষ মোড় পর্যন্ত রাস্তাাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কার্যক্রম চলায় দেবদারু মন্ডিত কংক্রিটের সড়কটি ব্যবহার করতে হচ্ছে চালকদের। সংস্কার চলমান রাস্তাটি মূলত ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের। আমরা সিটি কর্পোরেশনকে বেশ কয়েকবার রাস্তাটির সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার কথা বললেও তারা এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। দ্রæত গতিতে রাস্তাটির সংস্কার করার জন্য আমরা তাদেরকে আবারও জানাবো। এ রাস্তাটি চলাচললের উপযুক্ত হলে দেবদারু সড়কটি ধ্বংসের কবল থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।’