ময়মনসিংহে বিনিয়োগ শিক্ষার কনফারেন্স হবে

দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ শিক্ষা বিস্তার সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএসইসি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)’। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের ময়মনসিংহ বিভাগে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কনফারেন্স আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি ও বিএএসএম।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে কনফারেন্স অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএএসএম তাদের লোকবল এবং তহবিল ব্যবহার করে ওই বিভাগীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি গ্রহণ ও সম্পন্ন করবে। এ লক্ষ্য বিএসইসি’র ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তথ্য মতে, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ময়মনসিংহ বিভাগে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কনফারেন্স আয়োজন করার বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের এ অনুষ্ঠানটি দুইটি ভাগে আয়োজন করা হবে। একটি হলো বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ, অপরটি হলো বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ক আলোচনা।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার, মেয়র, ডিসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিসহ অন্যান্যর উপস্থিত থাকবেন। ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষা ও সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করবেন।

এর আগে দেশের অন্যান্য বিভাগে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে এ ধরনের কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছে। তবে ময়মনসিংহে এখন এ ধরনের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই এবার ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বশেষ বিভাগীয় বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক কনফারেন্স হবে। এরপর জেলা পর্যায়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেলা পর্যায়ে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে এ ধরনের আনুষ্ঠান আয়োজন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি ও বিএএসএমের মতে, দেশের শেয়ারবাজারে এখনও অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। তারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে জানেন না। তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। তাই গুজব, ধারণা ও আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে বাজারে তথ্যের অসামঞ্জস্য বাড়ে। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে থাকেন। এর ফলে বাজার কারসাজির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। যার ফলে শেয়ারবাজারে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলে, শেয়ারবাজারে তথ্য অসামঞ্জস্য কমবে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ও দক্ষ হবে। বাজার কারসাজির সম্ভাবনা কমবে। এরই ধরাবাহিকতায় বিএসইসি ২০১২ সালে একটি ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, যেখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়। এই উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করার জন্য স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করার কথা বলা হয়েছে। তাই জাতীয় পাঠ্যক্রমে আর্থিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি ও বিএএসএম। ইতিমধ‌্যে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিএসইসি। দেশের শেয়ারবাজারে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী গড়ে তুলতে বিএসইসির নির্দেশে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী িবলেন, ‘ময়মনসিংহ বিভাগে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কনফারেন্স আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে আমাদের একটি দল ময়মনসিংহ ঘুরে এসেছে। সেখানকার বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। এ জন্য একটি ইভেন্ট ম্যানেজারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আমরা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ অনুষ্ঠানটি করতে পারবো। আর এ অনুষ্ঠানটি বিএসইসি ও বিএএসএম যৌথভাবে আয়োজন করছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট হলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একটি একাডেমিক শাখা। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএএসএম উদ্বোধন করেন। সারা দেশে আর্থিক সাক্ষরতা সম্প্রসারণের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৬ মে প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ডা. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বিআইবিএমের মহাপরিচালক হিসবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় শেয়ারবাজার শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য, বাংলাদেশ সরকার বিএএসএমকে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৩৩.০৩ কাঠার একটি প্লট প্রদান করে। পাশাপাশি বিএএসএমের একটি চলমান ক্যাম্পাস রয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায়। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান, অধ্যপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব গভর্নরসের চেয়ারম্যান। বিএসএমএম সারাদেশে আর্থিক সাক্ষরতা প্রদানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের মৌলিক বিষয়গুলোকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাচ্ছে।

Share this post

scroll to top