বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ইতিহাস সৃষ্টি করে সফলতার সঙ্গে উড়ে গেল আকাশে। শনিবার ফ্রেন্স গায়েনার কোউরোউ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে আকাশের দিকে মুখ করে পৃথিবী ছাড়ে এই টেলিস্কোপ। আরিয়ান রকেট তাকে বহন করে নিয়ে যায়। এই টেলিস্কোপ তৈরিতে খরচ পড়েছে ১০০০ কোটি ডলার। ৩০ বছরের ডিজাইন এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে জ্যোতির্বিদরা প্রস্তুত করেন জেমস ওয়েবকে।
উৎক্ষেপণের আধা ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে তা নিজের কক্ষপথে পৌঁছে যায়। কেনিয়ার মালিন্দি’তে অবস্থিত অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে এর প্রথম সিগন্যাল। তাতে সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছার তথ্য জানানো হয়। এ সময় ওই কেন্দ্রে সমবেত বিজ্ঞানীদের মধ্যে দেখা দেয় উল্লাস।
তারা হাত নেড়ে, থামআপ দিয়ে হাসিমুখে উদযাপন করেন। চারদিকে তখন করতালি। সবার মুখে হাসি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা শুভাশীষ জানাতে থাকেন। ইউটিউবসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এ দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
‘অ্যাপোলো মুন’ মিশনে চাঁদে অবতরণের অন্যতম এক কারিগরের নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। হাবল টেলিস্কোপের কার্যকারিতা শেষ হয়ে আসছে। তার উত্তরসূরি হিসেবে মহাকাশে অবস্থান করে তথ্য পাঠাবে জেমস ওয়েব।
হাবলের চেয়ে ১০০ গুণেরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এই টেলিস্কোপটি যৌথভাবে তৈরি করতে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রকৌশলীরা। টেলিস্কোপটি শনিবার গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ফ্রেঞ্চ গায়ানার কোউরু মহাকাশ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে।
নতুন এই টেলিস্কোপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, একটি প্রতিফলক আয়না। যা ৬.৫ মিটার চওড়া। বিশালাকৃতির এই আয়নার পেছনে সোনার প্রলেপ লাগানো। এই টেলিস্কোপটি হাবল টেলিস্কোপের তার চেয়ে প্রায় তিনগুণ বড়।
বিশাল আয়না এবং চারটি অতি-সংবেদনশীল যন্ত্রের কারণে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যের অনেক গভীর পর্যন্ত দেখতে পাবেন।
এর ফলে তাত্ত্বিকদের মতে প্রথম যে তারাগুলোর আলোয় সাড়ে ১৩শ কোটি বছর আগেকার বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের পর নেমে আসা অন্ধকার কেটে গিয়েছিল- তার অনুসন্ধান করা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলেন- সে সময় ঘটা পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রথমবারের মতো কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফারের মতো ‘ভারী পরমাণু’গুলো গঠিত হয়েছিল- যা প্রাণ সৃষ্টির জন্য ছিল অত্যাবশ্যক।
জেমস ওয়েবের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, বহু দূরের গ্রহগুলোর পরিবেশ কেমন তা পর্যবেক্ষণ করা- যার ফলে তারা অনুমান করতে পারবেন যে সেগুলোতে আদৌ প্রাণির বসবাসের মতো পরিবেশ আছে কিনা।
এ টেলিস্কোপটি যে কক্ষপথে স্থাপিত হবে তা পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে। সেখানে মহাশূন্যের তাপমাত্রা হচ্ছে মাইনাস ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস অর্থাৎ শূন্যের ২৩৩ ডিগ্রি নিচে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির উর্ধতন উপদেষ্টা মার্ক ম্যাককফরিয়ানস বলেন, সেই চরম শীতল তাপমাত্রাতে তার ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলো আর জ্বলজ্বল করবে না এবং তার ফলেই জেমস ওয়েব সেই বহুদূরের জগতের ছবি তুলতে পারবে, যেখানে প্রথম গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, তখন অন্যান্য তারার চারদিকে যেসব গ্রহ ঘুরছে- সেগুলোরও ছবি তোলা সম্ভব হবে।