নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আবেদন জানানোর সুযোগ ভাবাটাও অর্থহীন বলছেন তারা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েও বিএনপি মাথা ঘামাচ্ছে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী ২০ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া এ সংলাপে কারা অংশ নেবেন, আর আমন্ত্রণই বা কারা পাবেন; তার দিকেই সবার দৃষ্টি এখন।
এমন অবস্থায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসা বিএনপি সংলাপে যাবে কি না, তা নিয়ে সব মহলেই রয়েছে সংশয়। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে এখনই যাচ্ছেন না বলেও সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংলাপে যাওয়া নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। আমাদের আলোচনা যখন হবে তখন আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) তখন সেটা জানিয়ে দেবেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সেলিমা রহমান বলেন, প্রথম থেকে একটা কথাই বলে আসা হয়েছে; আমরা এ ধরনের কোনো সংলাপে যাব না। এই নির্বাচন কমিশন যেটাই গঠন করা হোক না কেন, যদি আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু আওতায় নিয়ে না আসতে পারি, তাহলে নির্বাচন কমিশনের আমাদের কোনো কাজ নেই। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে সার্চ কমিটি হবে সেটাও ওই একতরফা হবে। কাজেই সেখানে আমাদের আলোচনায় গিয়ে লাভ নেই। সংলাপের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত রাজি না। এখন পর্যন্ত যাচ্ছি না আরকি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এ সংলাপকে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের সুযোগ বলে মনে করে না, জানান দলটির নেতারা।
এ নিয়ে সেলিমা রহমান আরও বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি কিন্তু যে সে মানুষ নন, তার জন্য আমাদের সংলাপের মধ্যে দিয়ে তার বিদেশে চিকিৎসার কথা বা আবেদনের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে এটা তো সম্ভব না। আমাদের সংলাপে যেতে হবে কেন? রাষ্ট্রপতি যদি ইচ্ছা করতেন তাহলে এটা অনেক আগেই এটা করতে পারতেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চাওয়া কি কোনো সুযোগের ব্যাপার, এটা তার অধিকার। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঙ্গে সংলাপ ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় জড়িত করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। এর আগেই নতুন কমিশন নিয়োগ দিতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। সে জন্য কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন তিনি।
তাই নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি সোমবার বিকেল ৪টায়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ সংলাপ শুরু করবেন তিনি। ইতোমধ্যে আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছে দলটি।
জানা গেছে, ইসি গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মতো মো. আবদুল হামিদও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল এখন ৩৯টি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক মাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। তবে এবারও ৩১টি দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেক্ষেত্রে একাধিক দল নিয়ে একই দিনে সংলাপ করতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করে কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। সংলাপ শেষে সার্চ কমিটি গঠন করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।