বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সামনে বড় বিপদ!

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বড় বিপদ এগিয়ে আসছে। পাচারের শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। দেশে ও দেশের বাইরে দালালের খপ্পরে পরে পাচার হওয়াদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

প্রায় ১৮ মাস ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মিয়ানমারের এই অধিবাসীদের জন্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা কক্সবাজারে তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এই ক্যাম্প থেকেই পাচার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পের আশেপাশেই ওঁৎ পেতে আছে পাচারকারীরা।

রোহিঙ্গা শরণার্থী নাজমা বেগম জানান, ৭ মাস আগে তার মেয়ে পাচারের শিকার হয়। তার সন্তান ১৭ বছর বয়সি রাশিদাকে এক ব্যক্তি প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো। সেই তাকে পরে পাচার করে দেয়। দুইদিন পর পুলিশ রাশিদাকে যশোর থেকে উদ্ধার করে। যশোরের বেনাপোল সীমান্তের যে স্থান থেকে রাশিদাকে পাচার করা হয় সেটি যৌনকর্মী পাচারের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।

৬ হাজার একর জমির এই আশ্রয়কেন্দ্রতে পূর্ণাঙ্গভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজের লোভ দেখিয়ে মূলত ক্যাম্পের বাইরে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না শিগগির। যেহেতু আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একজনকেও মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে পাঠানো হবে না। ফলে এখানেই অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকছে রোহিঙ্গারা।

আট সন্তান নিয়ে এক ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন জোহার ও উম্মে কুলসুমা দম্পতি। তাদের দুই মেয়ে বড় হয়েছে। আর সবার ছোটটার বয়স দুই বছর। রাখাইনে কৃষি কাজ করতেন জোহার। এখন কাজ নেই, সাহায্যে চলছে তাদের জীবন।

পাচার প্রসঙ্গে র‍্যাবের কমান্ডার মেজর মেহেদি হাসান বলেন, ‘‘প্রত্যাবাসনের আলাপ মাঝপথে থেমে যাওয়ার পরই পাচারের প্রবণতা বেড়েছে।”

পুলিশের সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী, ৩০ জানুয়ারি যশোর থেকে ৫ রোহিঙ্গা মেয়ে ও এক ছেলে উদ্ধার করে পুলিশ। এদেরকে ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর ছয়দিন আগে চট্টগ্রাম থেকে পাচার হওয়া ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ‌র‍্যাব। তার আগে গত নভেম্বরে তিন দফায় ৫৭ রোহিঙ্গা উদ্ধার হয় মালোয়েশিয়াগামী নৌকা থেকে।

নেই সুনির্দিষ্ট তথ্য
পাচার হওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়ে সরকার এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে।

স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে ইয়াং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক যীশু বড়ুয়া বলেন, ‘‘গত তিন মাসে কমপক্ষে ২০০ শরণার্থী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যা বাড়ছে।” তিনি জানান, তারা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত।

এদিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের মুখপাত্র ফিওনা ম্যাকগ্রেগর বলেন, তার প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ২০৪টি পাচারের ঘটনা নিশ্চিত করতে পেরেছে। তিনি আরো বলেন, এটি মোট পাচার হওয়াদের একাংশ মাত্র। মূল সংখ্যাটা আশঙ্কাজনক। বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীরা নাজুক পরিস্থিতিতে আছে।

অন্যদিকে পাচারের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীদের সংকট আরও বেশি। উদ্ধার হওয়া রাশিদার মা বলেন, ‘‘আমরা এমন একটি অবস্থায় আছি যে যেকোনো বিপদ ঘটতে পারে, এতে আমাদেরই সতর্ক থাকা উচিত। কিন্তু আমার বোকা মেয়ে প্রলুব্ধ হয়ে ভুল করেছে। এখন তার বিয়ে হয়েছে এই ক্যাম্পেরই এক ছেলের সঙ্গে, কিন্তু সেই ছেলে তার পাচারের ঘটনা জানে না। জানলে তার বিয়ে হতো না।”

রাশিদার মা আরও বলেন, তার মেয়ে এখন সুখী আছে, তাই এই ঘটনা প্রকাশ করে বিপদ বাড়াতে চান না। এদিকে রাশিদার মতো পাচার হয়েছিলেন রামিদা খাতুন। তাকে তার স্বামী জোর করে সিলেট নিয়ে যান পাচারকারীদের সঙ্গে। কথা ছিল সেখান থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে মালোয়েশিয়া চলে যাবেন তারা। ৯ দিন পরে সিলেটের একটি হোটেল থেকে রামিদা খাতুনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top