২০১৫ সালে ইউরোপে পৌঁছতে গিয়ে মারা গিয়েছিল ৩ বছরের আয়লান কুর্দি। তুরস্কের পুলিশ তার লাশ উপকূল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল। এর আগে সাগর পাড়ে তার নিথর ছোট্ট শরীরটি যেখানে পড়েছিল, তার ছবি তুলেছিলেন এক ফটোগ্রাফার। সেই ছবি তখন পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। ওই ছোট্ট নিথর নিস্তেজ আয়লান অভিবাসী বিষয়ে অনেক দেশকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করেছিল।
রোববার ভূমধ্যসাগর থেকে অভিবাসীপ্রত্যাশীদের উদ্ধারকারী একটি জার্মান জাহাজের নামকরণ করা হয় আয়লান কুর্দির নামে। স্পেনের ব্যালিয়ারিক দ্বীপ ম্যালোরকার পালমাতে একটি জার্মান দাতব্য সংস্থা সি-আই তাদের জাহাজের এ নতুন নামকরণ করে। এ সময় সেখানে আয়লান কুর্দির পিতা আবদুল্লাহ কুর্দি ও ফুফু টিমা কুর্দি উপস্থিত ছিলেন।
সি-আইয়ের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আবদুল্লাহ কুর্দি বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে, একটি জার্মান উদ্ধারকারী জাহাজ আমাদের ছেলের নামে তাদের জাহাজের নামকরণ করেছে। সাগরতীরে পড়ে থাকা আমার ছেলের ছবি কোনোভাবেই ভোলা যাবে না। আমার হাত থেকে যেমন আমার স্ত্রী ও সন্তানের হাত ছুটে গিয়েছিল, এমন পরিণতি হয়েছে আরো হাজারো মানুষের সাথে, যারা তাদের ছেলে মেয়েদের ঠিক এমনিভাবেই হারিয়েছে।
তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমার জন্য কঠিন একটি দিন। কারণ আজ আবার নতুন করে আমার সেই বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলো মনে করতে হচ্ছে। তারপরও আমি গর্বিত যে এই দাতব্য সংস্থাটি আমার ছেলে নামে তাদের এই জাহাজের নামকরণ করেছেন। আমি মনে করি এর দ্বারা ভালো কিছুর সাথে আমার ছেলের নামটি যুক্ত থাকবে এবং এ কারণে তার ছোট্ট আত্মাটি শান্তি পাবে।
২০১৫ সালে যুদ্ধাবস্থা থেকে বাঁচতে পরিবারসহ গ্রিসের পানে চলছিলেন সিরিয়ার আবদুল্লাহ কুর্দি। পথিমধ্যে টিমার সাথে সাক্ষাত করতে তুরস্ক থেকে কানাডার দিকে যাচ্ছিলেন তারা। এক্ষেত্রে তুরস্ক ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের ছোট নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় আবদুল্লার স্ত্রী রেহানা এবং তার ছেলে গালিব ও আইলানসহ ১১ জন মারা যায়। পরিবারের মধ্যে কেবল আবদুল্লাহ কুর্দিই বেঁচে যান।
আয়লান তখন ভাসতে ভাসতে উপকূলের বালিতে গিয়ে ঠাঁই নেয়। বালুর দিকে মুখ করে থাকা আয়লানের সে ছবিটি বিশ্বকে হতভম্ব করে দেয়। বরং তার ছবিটিই বিশ্বজুড়ে চলা অভিবাসন সংকটকে প্রকট করে তুলে ধরে।
সি-আই জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে তাদের এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত সাগরে ট্রলার বা নৌকা ডুবির শিকার ১৪ হাজারের বেশি লোক তারা উদ্ধার করেছেন।
এর আগে এ জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছিল অধ্যাপক আলব্রেচট পেনকের নামে।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন, ডয়চে ভেলে