ইস্যু যখন হাতির শুঁড়

হাতি তো হাতিই। তার মূর্তি তো হাতির মূর্তিই। কিন্তু শুঁড়টি কোথায়? উঁচু করে রাখা, না নিচে নামানো- এ বিষয়টিই এসে দাঁড়িয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী ও তার দল বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) মধ্যখানে।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লাখনৌ ও নয়ডার পার্কগুলোতে হাতির মূর্তি স্থাপন করেছিলেন মায়াবতী। এজন্য ২০০৮-০৯ অর্থবছরের রাজ্য বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। এ ইস্যুতে গত শুক্রবার এক পর্যবেক্ষণ প্রদান করেন সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট।

তাতে বিএসপির এই নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, নিজের এবং দলীয় প্রতীকের মূর্তি বানানোর জন্য যে সরকারি টাকা খরচ করেছেন মায়াবতী তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের এ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিতভাবেই দল ও নেত্রীর জন্য বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু সেই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে তারা চড়ে বসেছেন হাতির শুঁড়ে। মূর্তি যা বানানো হয়েছে, তাতে তো হাতি শুঁড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ মায়াবতীর দলীয় প্রতীকে শুঁড়ের অবস্থান নিচে। ফলে মায়াবতীর দলের বক্তব্য হচ্ছে, এটি কোনোভাবেই তার দলীয় প্রতীক নয়, যার জন্য তাকে এ অর্থ কোষাগারে জমা দিতে হবে।

বছর দশেক আগে একদল আইনজীবী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন, মায়াবতী সরকার ২৬০০ কোটি টাকা খরচ করেছে নানা স্মারক তৈরির জন্য। সরকারি কোষাগারের ৫২ কোটি টাকা খরচ করে বসানো হয়েছে ৬০টি হাতির মূর্তি। আর এই হাতিই বহুজন সমাজ পার্টির নির্বাচনী প্রতীক। সেই মামলার শুনানিতেই শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বলে, এই টাকা নিজের পকেট থেকে শোধ করতে হবে মায়াবতীকে।

কিন্তু মায়াবতী ও তার দল এ বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রথমত মূর্তিতে যে সব হাতি রয়েছে সেগুলোর শুঁড় যেহেতু ওপরের দিকে ওঠানো তাই এগুলো তার দলীয় প্রতীক নয়। দ্বিতীয়ত এগুলো কোনোভাবেই সরকারি অর্থের অপচয় নয়, কারণ সেখানে পর্যটক আসছে, রাজ্যের আয় হচ্ছে। আর মামলার চূড়ান্ত রায় যেহেতু ২ এপ্রিল দেয়া হবে, তাই এখনই অর্থ-জরিমানার কথা আসে না।

বরং মায়াবতীর দলের নেতারা বলছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি মানলে তো যেখানে যেখানে বিজেপির প্রতীক চিহ্ন ‘পদ্ম’ আছে, সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন স্থানে থাকা কংগ্রেসের ‘হাত’-এরই বা কী হবে?’

সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top