রোহিঙ্গা নেতা হত্যা তদন্তের দাবি অ্যামনেস্টি ও এইচআরডাব্লিউর

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। এই হত্যার ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সবাইকে তাদের অপরাধের জন্য ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করা এখন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব।

এ ছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মহিবুল্লাহ বাংলাদেশে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নেতা হিসেবে কাজ করেছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অপরাধের নথিগত সাক্ষ্য-প্রমাণ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। মহিবুল্লাহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার কাজের জন্য হত্যার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য মহিবুল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিলেন, যারা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আগমনের সময় ইতিমধ্যেই অকল্পনীয় ক্ষতি এবং যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি সবসময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার এবং তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন। তার হত্যাকাণ্ড রোহিঙ্গা শিবিরে যারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলে তারাও যে ঝুঁকিতে রয়েছে তারই একটি স্পষ্ট প্রমাণ।

‘মুহিবুল্লাহর মৃত্যু শুধু শরণার্থী শিবিরে বৃহত্তর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংগ্রামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং মিয়ানমারে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে তাদের প্রচেষ্টাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে মহিবুল্লাহর হত্যার পাশাপাশি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কর্মীদের ওপর অন্যান্য হামলার তদন্ত করা’।

৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। বুধবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।

কারা এই রোহিঙ্গা নেতাকে খুন করেছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সব মিলিয়ে এখন ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে।

২০১৯ সালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের যে সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা উঠেছিল, তার উদ্যোক্তা ছিলেন মুহিবুল্লাহ।

রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে মুহিবুল্লাহর সম্পর্কও স্থানীয়দের মধ্যে আলোচিত ছিল। ইংরেজি জানার সুবাদে তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা চালাতেন।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার খবর শুনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ‘গভীর শোকাহত’ হয়েছেন বলে তার মুখপাত্রের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।

Share this post

scroll to top