ময়মনসিংহে ট্রেনের ছাদে ডাকাতি ও দুজনকে হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১৪।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক উইং কমান্ডার রুকনুজ্জামান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় র্যাব বিশেষ অভিযানে প্রথমে ময়মনসিংহ শহরের শিকারিকান্দা এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম স্বাধীনকে আটক করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চেইন অপারেশনের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত পেশাদার ডাকাত ময়মনসিংহ নগরীর বাঘমারার মাকসুদুল হক রিশাদ, মো. হাসান, রুবেল মিয়া ও মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব ১৪-এর উইং কমান্ডার আরও জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৪জন পেশাদার ডাকাত জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। পরে রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তখন তাদের সাথে যোগ দেয় আসামি মোহাম্মদসহ আরও একজন। ফাতেমা নগর স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে ডাকাত দল ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট শুরু করে। ডাকাতির এক পর্যায়ে ভিকটিম মৃত মো: সাগর মিয়া ও নাহিদ বাঁধা দিলে তাদের সাথে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমের মাথায় এলাপাতাড়িভাবে আঘাত করে। মৃত সাগর ও নাহিদ যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়লে ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্ট্রেশনে ঢোকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে তারা নেমে যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং এই চক্র নিয়মিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত। ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এই ছোট ছোট উপ-গ্রুপগুলো কেউ টার্গেট শনাক্ত করতো, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত আর বাকিরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখতো। উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল, হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল, রুবেল লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য লুণ্ঠিত মালামাল স্বল্পমূল্যে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করত। রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার মামলা নং-০২/৩০ তাং ৯/১১/২০১৯ খ্রি. ধারা ৩৯২ দন্ডবিধি ও ময়মনসিংহ সদর থানার মামলা নং- ২২ তাং-৫/১০/২০১২ ধারা ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ১(ক) মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সে ২বছরের অধিক সময় কারাগারে ছিল।