রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারছে না। এমনকি এই ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকার মতো খেলাপি ঋণ আদায় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংক। এটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এগিয়ে আছে বিডিবিএল, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক। অন্য দিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি অবশিষ্ট পাঁচটি ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রূপালী ব্যাংক। আছে জনতা ও অগ্রণীও।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল, বিকেবি ও রাকাব) ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৮০ কোটি টাকা। বিপরীতে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১ হাজার ৯৩৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক ৯০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে ৬১৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ); ৪৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করেছে ১৫৮ কোটি ০৪ লাখ টাকা (৩৫ দশমিক ১২ শতাংশ); ৫০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক আদায় করেছে ১৭৯ কোটি টাকা (৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ); ১০০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক আদায় করেছে ১১৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা (১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ); ১৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক আদায় করেছে ৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা (৫৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ); ৯০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিডিবিএল ব্যাংক আদায় করেছে ৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা (৭২ দশমিক ৬৭ শতাংশ); ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিকেবি আদায় করেছে ৫৪৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা (৩৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ) এবং ৪০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাকাব আদায় করেছে ১৭৫ কোটি টাকা (৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ)।
এ ছাড়া অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ থেকে চলতি অর্থবছরে উল্লেখিত আটট ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫৬১ কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যাংকগুলো গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আদায় করেছে ২০৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায়ের হার ৩৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অবলোপন খাত থেকে আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এগিয়ে আছে রূপালী ও বিডিবিএল এবং সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বেসিক ব্যাংক।
অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ খাত থেকে ২০০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক ৮৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা (৪৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ); ১৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক ১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা (১৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ); ১৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক ৪৬ কোটি টাকা (৩০ দশমিক ৬৭ শতাংশ); ৩৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ২৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা (৭২ দশমিক ৮ শতাংশ); ১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বেসিক ব্যাংক ২০ লাখ টাকা (২ শতাংশ) এবং ৩০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিডিবিএল ১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা (৬২ দশমিক ৭৭ শতাংশ) আদায় করেছে। এ ছাড়া অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ খাত থেকে ৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিকেবি ৭ কোটি ০৩ লাখ টাকা এবং ২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাকাব ১ কোটি টাকা আদায় করেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, খেলাপি ও অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকগুলোকে একটি ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ হাতে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজন হলে বিশেষ টিম গ্রহণ করার জন্যও বলা হয়েছে। এরপর আমরা বছর শেষে ব্যাংকগুলোর পরফরম্যান্স খতিয়ে দেখবো। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তখন ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া হবে।