মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে শতাধিক বসতঘর বিলীন

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের মুলচর গ্রামের রাক্ষুশি পদ্মা নদীর ভাঙনে শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে।

গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দিবাগত রাত থেকে সোমবার (৩০ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত চোখের পলকে রুমা রানী মন্ডল, চন্দনা ও শুভ ঘোষসহ শতাধিক পরিবারের বসত-ঘর শাখা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার খবর পাওয়া গেছে।

সর্বগ্রাসী পদ্মার তীব্র স্রোতের তোড়ে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হালদার জানান, তীব্র স্রোতের তোড়ে পদ্মা শাখা নদীর তীরে বেশ কয়েকদিন ধরেই অল্প-স্বল্প করে ভাঙন দেখা দেয়। এরমধ্যে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শুরু করে সোমবার সকাল পর্যন্ত আকস্মিক অন্তত ১০০টি বসত-ঘর নদী গর্ভে চলে যায়। এ অবস্থায় শাখা নদীর তীরের শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার শাখা নদী সংলগ্ন দিঘীরপাড় এলাকার শত বছরের প্রাচীন মূলচর ও কামাড়পাড়া এলাকায় নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন বাড়ছে। ভাঙন শুরু হওয়ায় অনেকে ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার শুধু বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। বাঁধ না থাকায় তারা পদ্মার ভাঙনে তাদের বাপ-দাদার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হতে বসেছেন।

রাহিমা বেগম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, হঠাৎ কইরা সব ভাইঙা যাইতাছে। আমাগো থাকার জায়াগাটুকুও এখন নেই। আমরা কই যাবো? কে আশ্রয় দিবো?

রুমা রাণী মণ্ডল নামের আরেক নারী বলেন, ‘কিচ্ছু রইলো না। এখন কোথাও যদি জায়গা পাই যাবো, নয়তো নদীর দিকে তাকাই আছি। নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে মরে যাবো।’

এ বিষয়ে দিঘীরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন হালদার জানান, শুক্রবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার কামাড়পাড়া গ্রামের প্রায় ১০০টি ও এর আগে এক সপ্তাহে নদী পাড়ের ৪০টি বসতঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে।

এদিকে, ভাঙন কবলিত অন্তর ঘোষ বলেন, ‘কয়েকদিন ভাঙন আতঙ্কে কয়েকটি বসত-ঘর বিক্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু যার কাছে বিক্রি করেছিলাম, তিনিই আর ঘর দু’টি ভেঙে নিতে পারলেন না। গভীর রাতে আকস্মিক ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেলো ঘরগুলো।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, ‘ভাঙনের শিকার পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে, ভাঙন রোধে তারা পদক্ষেপ নিবেন।’

Share this post

scroll to top