খুন, লাশ, মৃত্যুদণ্ড

দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা ও লাশ উদ্ধারের ঘটনার পাশাপাশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঊর্ধ্বগতি চলছেই। একই সাথে আদালতেও অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার রায় দেয়া হচ্ছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নববধূ, পাবনায় কৃষকলীগ নেতা হত্যার শিকার হন। নাটোরে পাওয়া যায় এক শিক্ষার্থীর লাশ। এ ছাড়া গত বুধবার কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও নারায়ণগঞ্জে নারীসহ চার ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, হাতে

 মেহেদি রঙ এখনো রয়ে গেছে। স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করবেন। কিন্তু সেই আশা চুরমার করে দিয়ে এক মাসের মাথায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন নববধূ নাঈমা আক্তার (২১)।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকার হান্নান মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে নাঈমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় স্বামী শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসখানেক আগে বাগেরহাট জেলার দেলোয়ারের কন্যা নাঈমা আক্তারকে শহিদুল ইসলাম বিয়ে করেন। শহিদুল খুলনা জেলার রূপসা থানার তালিমপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে। সিদ্ধিরগঞ্জের নতুনবাজার এলাকায় ছোট ভাই আমিনুল ইসলামের বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খাবারের জন্য আমিনুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগমকে ডাক দিতে গেলে হাত, মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় ঘরের আড়ার সাথে নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, ধারণা করা যাচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্বামী তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মো: শাহীন শাহ্ পারভেজ বলেন, গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামীকে থানায় আনা হয়েছে।

পাবনায় কৃষকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা : আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাবনার চর শিবরামপুর এলাকায় খাইরুল ইসলাম (৪২) নামে এক কৃষকলীগ নেতার দুই পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। খাইরুল সদর উপজেলার চর শিবরামপুর গ্রামের মৃত সাবের আলীর ছেলে। তিনি ঠিকাদারি করতেন ও ৯নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের আহ্বায়ক ছিলেন।
জানা গেছে, ঘটনার সময় চর শিবরামপুর স্লুইসগেটের অদূরে জলাশয়ে মাছ ধরতে যান খাইরুল ইসলাম। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যায়। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কারা, কি কারণে হত্যা করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

কুড়িগ্রামে শিক্ষার্থী খুন
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের কামারপাড়ায় গত বুধবার সকালে হাবিবুর রহমান (১৯) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে কুড়িগ্রাম থানা পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম পৌর এলকার পূর্ব কামারপাড়া গ্রামে কৃষিজমিতে যুবকের লাশ দেখে এলাকাবাসী কুড়িগ্রাম থানা পুলিশে খবর দেন। সে চিলমারী উপজেলার ঢুসমারা থানার চর মুদাফৎ কালিকাপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। কে বা কারা তাকে পা বেঁধে হত্যা করে। তার পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতও রয়েছে। নিহত যুবকের পকেট থেকে দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাবিবুর কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে পড়ত। এর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জজ কোর্টে আইন সহায়তাকারীর (মহুরি) কাজ করত।
নাটোরে যুবকের লাশ
নাটোর সংবাদদাতা জানান, নাটোর সদর উপজেলার গাজীর বিল এলাকা থেকে মো: ওয়াসিম (২৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত ওয়াসিম সদর উপজেলার হয়বতপুর দেওয়ানপাড়ার মতিউর রহমানের ছেলে। হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো: মোজাম্মেল হক জানান, সকালে স্থানীয় লোকজন মহাসড়কের পাশে লাশটি দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ফজরের আজানের সময়ও ওয়াসিম নিজের ঘরেই ছিলেন। কখন, কিভাবে তিনি বাড়ি থেকে বের হন কেউ বলতে পারছেন না।

কুমিল্লায় অজ্ঞাতের ঝুলন্ত লাশ
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় রেলসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বুধবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগাম রেল সড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে মাশরা এলাকায় রেললাইনের পাশের একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা (৫০) এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।

সোনাগাজীতে নিখোঁজ শিক্ষকের লাশ
সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, সোনাগাজীর চরমজলিশপুর ইউনিয়নের স্কুলশিক্ষক আহমদ উল্লাহর লাশ কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি নিখোঁজ হলে গত বুধবার দুপুরে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তিনি দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা করিম উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
পরিবার সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে সোনাগাজীর চর মজলিশ পুর ইউনিয়নের চর লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামের বাড়ি থেকে বের হন আহমদ উল্লাহ (৪৫)। পরে বিকেলে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বুধবার বেলা ২টার দিকে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। রাত ৯টায় কুমিল্লার বুড়িচং থানায় লাশের সন্ধানের খবর আসে।

আড়াইহাজারে অজ্ঞাত নারীর লাশ
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, আড়াইহাজারে অজ্ঞাত (৪০) এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাস্তা পারাপারের সময় অজ্ঞাত বাসের চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। গত বুধবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার পুরিন্দা বাজারের সামনে থেকে ওই লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

কুষ্টিয়ায় ১ জনের ফাঁসি ও ৯ জনের কারাদণ্ড
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ায় কিশোর বাবুল হোসেনকে হত্যার দায়ে খাইরুল ইসলাম (৩৬) নামে এক আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৯ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। গতকাল বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক মো: মশিয়ার রহমান এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খাইরুল ইসলাম কুমারখালী উপজেলার কোমরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ওমেদ আলীর ছেলে। একই সাথে খাইরুলের চাচাত ভাই সামাদ প্রমাণিকের ছেলে মো: জিকুকে (৩২) এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বাকি আটজনের তিন মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এরা হলেনÑ খাইরুলের ভাই ফারুক হোসেন (৩২) তার বাবা ওমেদ প্রামাণিক (৬০), চাচা আছান প্রামাণিক (৫৮), আবুল কাশেম (৪৮), ওছেল প্রামাণিক (৫০), মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান (৪০), সদর উদ্দিনের ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫) ও জুমারত আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪২)।
জানা যায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাবুল হোসেনের (১৪) বাবা পলাশ উদ্দিনের বাড়িতে আসামিরা দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হামলা করে। তারা পলাশ উদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তার ছেলে বাবুল ঠেকাতে গেলে তাকেও আসামিরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

না’গঞ্জে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সন্তানের সাক্ষীর ভিত্তিতে এক মায়ের ঘাতককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ দায়রা জজ আদালত। বন্দরের নবীগঞ্জ নোয়াদ্দা এলাকার গৃহবধূ নিশা বেগম হত্যা মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত এ আদেশ দেন। নিশা বেগমের সন্তান আরজু ও আজমীরের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এ আদেশ দেয়া হয়। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আবদুর রহমান হলেন নিশা বেগমের ননদের স্বামী। নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারক শেখ রাজিয়া সুলতানা এ রায় দেন। নিশা বেগম বন্দরের নবীগঞ্জ নোয়াদ্দা এলাকার তাজুল ইসলামের স্ত্রী। আসামি মো: আবদুর রহমান তাদের সাথেই বসবাস করতেন।
২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর রাতে নিশা বেগমকে কুপ্রস্তাব দিলে রাজি না হওয়াতে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে আবদুর রহমান।

Share this post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top