যাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সেই মুক্তিযোদ্ধারাই কমপ্লেক্সে আসেন না। বছরব্যাপী বন্ধ থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি যেন হয়ে উঠেছে মাদকসেবীদের নিরাপদ স্থান, পোকা মাকড়ের বসতি। অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ভবনের আসবাবপত্র।
নালিতাবাড়ী পৌরশহরের ৭নং ওয়ার্ডে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি। ভবনের প্রবেশ মুখেই রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবার রহমানের প্রতিকৃতি।
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসেও ভবনটিতে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা ওড়ে না। ভবনের সামনে থাকা উদ্বোধনী ফলকটি নষ্ট হয়ে গেছে। জাতির পিতার প্রতিকৃতিটিতেও ধূলা জমে আছে। চারপাশে তিন চার ফুট লম্বা আগাছা জন্মেছে। ঘর বেঁধেছে সাপ বিচ্ছু আর পোকা মাকড়। সন্ধ্যা হলেই নেশাখোরদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে ভবনটি। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ভবন ও ভবনের আসবাবপত্র।
ভবনটিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তার জন্যও কোনো লোক নেই। ২০১৩ সালে ভবনটি নির্মাণকালিন সময়ে ঠিকাদারের ফজল মিয়া নামে একজন নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন। ভবনটি উদ্বোধনের পর তিনি মারা গেলে এখন সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন তার স্ত্রী খোদেজা বেগম। কিন্তু কেউ তার খোঁজ খবর নেয় না, বেতনও দেয় না। শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি এখানে আছেন বলে জানান।
খোদেজা বেগম জানালেন, সাপ বিচ্ছুর ভয়ে থাকতে পারি না। তাই ভবনের মূল গেইটসহ ভবনটি তালাবদ্ধ করে রাখি। রাত হলেই গেইট টপকে বখাটেরা ভেতরে ঢুকে নেশার আসর বসায়। ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশিও মাদক সেবীদের আড্ডার কথা জানান।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরাদ হোসেন টেটন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত যাতায়াত ও ভবনটি ব্যবহার করতে পারলে আজ এই অবস্থা হতো না। সুন্দর পরিবেশ থাকলে, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। নির্বাচন হলেই মুক্তিযোদ্ধাদের সমাগম কিছুটা হলেও বাড়বে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে লাইব্রেরী, মুক্তিযুদ্ধ মিউজিয়াম স্থাপন করতে পারলে কমপ্লেক্সটি সচল হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও হেলেনা পারভীন বলেন, আমি নিজে ভবনটি পরিদর্শন করেছি। লকডাউন শেষে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওখানে কী করা যায় পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।