বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশকৃত শিক্ষকেরা মনোনীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকেরা যোগ দিতে গেলে প্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শত শত শিক্ষক নিয়োগ না পেয়ে এনটিআরসিএতে এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন গতকাল সোমবার বিষয়টি স্বীকার করে নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের যোগদান করতে দেয়া না হলে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোতে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এখন থেকে এনটিআরসিএর সুপারিশকৃত শিক্ষকদেরই কেবল নিয়োগ দেয়া যাবে। গত বছরের মাঝামাঝি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন আইন ও বিধিমালা জারি করা হয়। এমপিভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা ও নির্দেশনা অনুসারে গভর্নিং কমিটি কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। এ নির্দেশনা অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল, গভর্নিং কমিটি অনুমোদন স্থগিতসহ নানা ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ দিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ ছিল।
এনটিআরসিএ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রি লেভেলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য অনলাইনে চাহিদা চাওয়া হয়। এতে গত ২৬ আগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৫ হাজার ১৮৬টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদে শিক্ষকের চাহিদা পাওয়া যায়। এর পরপরই এনটিআরসিএ এই পদগুলোতে নিয়োগের জন্য নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকদের কাছ থেকে গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। ৩৯ হাজার ৫৩৫টি পদের বিপরীতে ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ১৯৬টি আবেদন পাওয়া যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে। এনটিআরসিএ মেধাক্রমের ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি ১৫ হাজার ১৫৭টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৯ হাজার ৩১৭ জন শিক্ষককে নিয়োগের সুপারিশ করে।
এনটিআরসিএ’তে গিয়ে গতকাল সোমবার দেখা যায় শত শত শিক্ষক তাদের অভিযোগ নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন। কাউকে লিখিতভাবে অভিযোগ কেন্দ্রে দাখিল করতে দেখা গেছে। কেউ আবার চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে অভিযোগ জমা দিতে দেখা গেছে।
পাবনা জেলার কদমতলার সফি ফতেয়ালীকে ওয়াসী মহিলা মাদরাসায় নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও যোগদান করতে গিয়ে দেখেন প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। তাই সেখানে যোগদান না করে তিনি এসেছেন অভিযোগ নিয়ে। চট্টগ্রামের গহিরা কলেজে কৃষি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ প্রাপ্ত চারজন শিক্ষক কলেজে এ বিষয়টি না থাকায় যোগদান করতে দেয়া হয়নি। তারা এনটিআরসিএ-তে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা জানান, গহিরা কলেজে কৃষি বিষয়ে ‘প্রভাষক’ পদে যোগদানের জন্য সুপারিশ করা হলেও সে কলেজের অধ্যক্ষ তাদের জানান যে, কৃষি বিষয়ে এখনো তারা অনুমোদন পাননি, এনটিআসসিএতেও তারা চাহিদা দেননি। তাই এখানে যোগদান করার কোনো সুযোগ নেই। তারা বলেন, বিষয়টি আমরা এ কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে লিখিত এনে এনটিআরসিএতে জমা দিতে এসেছি।
এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ কোনো তালিকা করেনি। প্রতিষ্ঠানের দেয়া তালিকার ওপর ভিত্তি করে মেধাক্রম অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। তাই তালিকা দেয়নি এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। কলেজ ও স্কুলের চাহিদাপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। কেউ অসত্য তথ্য দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।