সীমান্ত জেলা শেরপুর। গত বছরের ৫ এপ্রিল শেরপুরে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। তখন থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত শেরপুরের করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু চলতি জুন মাস থেকে প্রতিদিনই ভাঙ্গছে করোনা শনাক্তের সকল রেকর্ড। সার্বিক বিবেচনায় চলতি জুন মাসে ভয়ংকর হয়ে উঠছে সদরের করোনা পরিস্থিতি। এনিয়ে সদর উপজেলার সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে।
শেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, করোনা শুরুর পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) ছিল শেরপুর জেলায় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। এই দিন শেরপুর জেলায় ৪৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ৪৯ জনের মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলাতেই রয়েছে ৪৮ জন। ওই দিন করোনায় পৌর এলাকায় এক তরুণীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এর আগের দিন বুধবার (১৬ জুন) ২৫ জন আক্রান্তের মধ্যে সদর উপজেলার ২০ জন। ১৪ জুন মোট আক্রান্ত ২৫ জনের মধ্যে ২৩ জন সদর উপজেলার। গত ১ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৫৩ জন। সূত্র মতে, এই ২৫৩ জনের মধ্যে ১৯৩ জনের বাড়ি সদর উপজেলায়।
তবে মে মাসে জেলায় মোট আক্রান্ত ছিল ৬৮ জন। যার মধ্যে সদর উপজেলার আক্রান্ত ছিলেন ১৯ জন। এপ্রিলে এই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯ জন। যার মধ্যে শেরপুর সদরের ১৭ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত মে মাসে জেলায় পরীক্ষা করতে আসাদের মধ্যে আক্রান্তের শতকরা হার ছিল ১১.৪। আর এ মাসের ১৭ দিনেই ওই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২১.৭ ভাগ। জুন মাসের মোট আক্রান্ত হিসাবের বিবেচনায় সদর উপজেলাতে (উপজেলা ভিত্তিক) শতকরা ৭৬.২৮ ভাগ। সব মিলিয়ে শেরপুর সদরের করোনা পরিস্থিতি নাজুকের দিকে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে অন্য রোগের কারণে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করলেই পাওয়া যাচ্ছে করোনার অস্তিত্ব।শেরপুরের পুলিশ, ব্যাংক, নিবন্ধন অফিসের বেশ কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর শরীরে মিলেছে করোনার অস্তিত্ব। আক্রান্ত হয়েছেন এখানের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক। এর প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস লিখিত আদেশ জারি করেছে অফিসের সবার করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে।
সব মিলিয়ে শেরপুরের সর্বত্র করোনা আতংক বিরাজ করছে। করোনা ঊর্ধ্বগতি রোধে জেলা প্রশাসন গত ১১ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত শুধু পৌর অঞ্চলে নয় দফা বিধি-নিষেধে জারি করেছে। প্রশাসনে কিছুটা তৎপরতা থাকলেও ওই বিধি-নিষেধ মানার প্রবণতা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।
হঠাৎ শেরপুরে করোনা ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, স্বাস্থ্য বিধি না মানা ও পরীক্ষা না করার প্রবণতা। এখনই এর প্রতিকার না করলে জেলাজুড়েই অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে। দ্রুত করণীয়র মধ্যে রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোর সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করা ও সদর উপজেলার মানুষের সাথে অন্যান্য উপজেলার যোগাযোগ সীমিত করা।
সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোবারক হোসেন বলেন, শেরপুর সদরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সময় চলে গেলে নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
জেলা সিভিল সার্জন একেএম আনওয়ারুর রউফ বলেছেন, পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলায় একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। লকডাউনের কথা স্বীকার না করলেও সর্বসম্মতি ক্রমে যা ভাল তা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলার এই শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।