ইসরাইলের যে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে চরমপন্থি ইহুদীরা

দীর্ঘ সেনাজীবন কাটিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন গ্রাম থেকে উঠে আসা তরুণ আইজ্যাক রবিন। মেয়ারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করে ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে লিকুদ পার্টির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ডানপন্থি এই নেতা। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৯২ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন তিনি।

ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে অসলো চুক্তি সম্পাদন করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন রবিন। কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি চরমপন্থি ইহুদিরা। তারা ওই চুক্তি ভণ্ডুল করতে নানা ছক আঁকে। কিন্তু তাদের পথের কাঁটা ১৯৯৪ সালে ইয়াসির আরাফাত, শিমন পেরেজের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করা প্রধানমন্ত্রী রবিন।

১৯৯৫ সালে ডান ও চরমপন্থি ইহুদিরা তাকে হত্যা করে। একটি শান্তি মিছিল চলাকালে তিনি এই স্থানে নিহত হন।

তেলআবিবে শান্তি সম্মেলনে বক্তৃতাদানকালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন ইহুদি ছাত্র ইয়াগাল আমীরের গুলিতে নিহত হন ১৯৯৫ সালে।

এর আগে ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে বসে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন এ চুক্তি সই করেছিলেন।

এ দুই নেতা তখন হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক হাত মেলান। পরে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও দেয়া হয়।

এদিকে অসলো চুক্তি ও বিল ক্লিনটনের কার্যক্রমের কারণে ফিলিস্তিনিদের মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন জোড়ালো হয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের উপস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের প্রথম বিমানবন্দরের উদ্বোধনের কারণে বিশেষভাবে এ স্বপ্ন জেগেছিল। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার স্বপ্নের মতো সিটিও আজ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

১৯৯৫ সালের ৪ নভেম্বর ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন আইজেক রবিন। ওই হামলাকারী ছিলেন চরম ডানপন্থী এক ব্যক্তি যিনি অসলো চুক্তির তীব্র বিরোধী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী রবিন যখন অসলো চুক্তির সমর্থনে একটি শান্তি মিছিল বের করেন। ওই মিছিল শেষে যখন তিনি হেঁটে গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময় ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি সেমি-অটোমেটিক পিস্তল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রবিনের শরীর লক্ষ্য করে ৩টি গুলি করে। এর মধ্যে দুটি গুলি তার শরীরে লাগে। আরেকটি গুলি তার দেহরক্ষীর গায়ে লাগে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরপরই পুলিশ ও রবিনের দেহরক্ষীরা ওই ঘাতককে আটক করে। পরে আদালতের রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর জরুরি ক্যাবিনেট বৈঠকে আর ইসরাইলের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন প্যারেজ ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন।

আইজ্যাক রবিনের মৃত্যুতে বিশ্ববাসী গভীরভাবে শোকাহত হন। রবিনের শেষকৃত্যে অংশ নেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক ও জর্ডানের রাজা হোসাইনসহ বিশ্বনেতারা।

Share this post

scroll to top